-মোঃ জাকির হোসেন
********
ময়না তদন্তের ব্যবচ্ছেদের পূর্বেই,
শব দেহ থেকে আত্মাটি বেরিয়ে এলো।
শহরের ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে বয়ে নিয়ে চলেছে
চিরন্তন আত্মা-
এখন আর তাঁকে কেউ হত্যা, গুম, কয়েদ কিংবা
বেত্রাঘাতের কড়ায় তার দেহের চামড়া তুলে নিতে পারবেনা।
নিজেকে একটু পরিক্ষা করে নিতে চাইলো আত্মা-
সে ভিড়ের মধ্যে একজনার শরীরের উপর ধাক্কা দিয়ে বুঝতে চাইলো,
কেউ দেখছে না কি তাকে।
পরক্ষণে সে নিজেই হাসিতে গড়াগড়ি খায় মাটিতে লুটিয়ে,
আরে সে তো আত্মা, তাকে কে ছুঁইবে?
হৃদস্পন্দন নেই বলেই তো সে আত্মা!
শরীরী আত্মা সমৃদ্ধ ছিল যখন,
তখন কত কিছুই না দেখেছে পৃথিবীর গোলক ধাঁধায়,
ধনী, গরীব, মূর্খ, শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত,বুদ্ধিজিবী কতকিছু!-
অশরীরী আত্মা বিদ্যুৎ গতিতে পৃথিবী ভ্রমণ শেষে ক্লান্ত হয়ে
আকাশ পানে দৃষ্টি হানে-
ক্ষণিকের ভ্রমণে সে উদ্ভ্রান্ত!
দেখেছে পৃথিবীর সকল কোণে বৈষমের ভারী শেকলে আবদ্ধ হবার আর্তনাদ!
স্বল্প শিক্ষিতরা ধমক খেয়ে আত্মগোপনে নিরালায়,
ধনীদের কপট কথায় খেই হারায় নিঃস্বরা।
শৈল্পিক জ্ঞান না থেকেও শিল্পীর হাত করে দেয় স্তব্ধ!
কালো কাপড়ে ঢেকে যায় চলমান জীবন মঞ্চ।
চতুস্কোণ বাক্সে বুদ্ধিজীবীদের অকারণেই চলে বাকযুদ্ধ!
এসব কিছুই নয়-
ধন ভান্ডার করে দিচ্ছে বিভেদ বৈষমের সীমারেখা।
সম্পদের ক্ষমতায় চির চেনা এই রুপ-
মার খেয়ে যাবে গরীব, মূর্খ ও কামলারা আজীবন।
কৃষকের আছে লাঙ্গলের ফলায় উৎপাদনের জ্ঞান,
মুচি, মিস্ত্রী গড়ে পাদুকা রাজমহল।
যে যার কাজে সবাই শিক্ষিত।
সবাই কি পারে সব কাজ, তবে কেন মূর্খ বলে চলে গালিগালাজ!
ময়না তদন্তের শবদেহটি বৈষম্য নিরসনে ছিল অবিচল-
সমাজের ক্ষত সারাতে ছিল সে অগ্রভাগে,
সেই কারণে তার দেহ আজ ময়নাতদন্তে-
বিভেদের পৃথিবীতে নেই কোন ঐক্যতান,
কোথাও শোনা যায়না সম্মিলিত শেকল ভাঙ্গার গান।
আত্মাটি লাশ ঘরের কাছে এসে দেখছে কাঁটা ছেঁড়া!
বিড় বিড় করে বলছে দিসনা আর যন্ত্রণা!
*******
১৯/০৮/২০২১