লিখেছেন : সমীরন রায়
মা তুমি কি খুব কষ্টে আছো!
তুমি কি খুব একা হয়ে গেছ!
একলা দুয়ারে সাঁঝবেলা মাঝে
কেন আছো বসে বুকে নিয়ে আমার ছবি!
মাগো, আমার কাছে এযে বড় কষ্টের ছবি।
তোমার মন খারাপ!
চোখের কোনেও যেন জল একটু!
—-
নারে খ্যাপা। ও কিছুনা।
আজতো তোর জন্মদিন;
আজ তুই সাতাশ হলি। তাই একটু…
তাই একটু কথা বলছি
এই সঙ্গী সাঁঝের সাথে।
তোর স্মৃতি আর তোরই গল্প
করছি বসে এই একলা সাঁঝের সাথে।
তুইতো ছিলি খুব দুষ্টুু, খুব ছটফটে, বড় বিচ্ছু।
সত্যি কথাও কত সহজে বলতিস!
দুঃখ শোনাতে হেসে ফেলতিস!
তিন্নি তোর প্রথম প্রেম— সেটা বললি;
“তিন্নিকে আমি খুব ভালোবাসিস”— সেটা বললি;
“তিন্নির আজ বিয়ে”— সেটাও বললি;
সবই বললি মজাকরে, হাসতে হাসতে।
তোর চলে যাওয়া!
সেটাও ছিল হাসতে হাসতে।
এইসব কথাই হচ্ছিল এই বন্ধু সাঁঝের সাথে।
একলা মানুষ তাই সময় কাটাই এই একলা সাঁঝের সাথে।
আমি বোধহয় তোর মা হতে পারিনি।
শুধু যশোদাই ছিলাম; দেবকী হইনি!
তাইতো ধরে রাখতেও পারিনি!
চোখের কোনে জল ? হ্যাঁ ওই একটুই!
ওটাকে আর ধরে রাখতে পারিনি!
হ্যাঁরে খোকা, সত্যিই তোকে পারিনি ভালোবাসতে!
তাই চলেগেলি তুই
আমায় ছেড়ে অমন করে হাসতে হাসতে!
ছুটিতে এলি একমাস বলে।
সাতদিন পর বললি, “যাবো চলে”
কার্গিলে নাকি যুদ্ধ লেগেছে।
তোর আপন মা খুব বিপদে রয়েছে।
— আবার তুই আসবি কবে;
দু’টো দিন আরও থাকলে হয়না?
মুচকি হেসে বলেছিলি;
“আসবো কিন্তু ফিরবো না”
সত্যিই তুই এসে ছিলি’, কিন্তু আর ফিরলিনা।
এলি তুই অনেক ভীড়ের মাঝে।
জয়ধ্বনি, কফিন আর তিনরঙা সাজে।
এলি মাথা উঁচুকরে বিজয়ী হয়ে।
ত্রিবর্ণে ঢাকা কফিনে শুয়ে।
মনে হচ্ছিল,
যেন মৃগয়া শেষে, ফিরলো বিজয়ী রাজা
সারা অঙ্গে সেজে বিজয়ীর সাজ।
আমায় নিয়ে ভাবিস না!
ভালো আছি!
তোর তো আজ জন্মদিন, তাই বুঝি একটু আজ…
আমায় নিয়ে ভাবিস না! সব সহে গেছে!
আমি একলা কই?
একা তো নই; কাছে তুইতো আছিস ছবি হয়ে!
আরো একজন পাশে থাকে রোজ
ছেড়ে সবকিছু নিজের কাজ।
ঠিক আমারই মতো, আমিই যেন;
আমার সখী এই একলা সাঁঝ।
ঠিক যেন আমি, নাকি আমারই মতো।
তাই ওর সাথেই করি গল্প যত।
দিনের আলো ছেড়ে চলে গেছে,
রাতের আঁধার এখনো আসেনি কাছে।
এও একলা, ঠিক আমারই মতো।
তাই ওর সাথেই সুখ-দুঃখের গল্প যত।
মনের সুখে দু’জনেই সাজি দুয়ো-রানীর সাজ!
বেশ আছি দুজনে আমরা!
আমি আর এই একলা সাঁঝ!
তারিখ :- ০৪/০২/২০২১
●(সংরক্ষিত)●
//////////////////