আমার ভারতবর্ষ
-তনুশ্রী বসু (পাত্র)
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
আগে, মানে অনেক আগে, আমার ছোটবেলার কথা,
ভাবতাম “সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি”।
শিশুমন, নিজের দেশকে নিয়ে গর্ব বোধ করতাম,
১৫ই আগস্ট, ২৩শে জানুয়ারি, ২৬শে জানুয়ারি।
মনটা আনন্দে ভরে উঠত, আমার দেশ ভারতবর্ষ, আমি ভারতবাসী,
আজ জ্ঞান হবার পর থেকে ঘৃণা আর লজ্জায় কুঁকড়ে উঠি।
যেখানে ভাইয়ে ভাইয়ে অশান্তি, সামান্য সম্পত্তির জন্য,
যেখানে সন্তান বদলে যায়, বাবা মাকে ভুলে যায় বড় হলে।
একে অন্যকে সাহায্য হাত বাড়িয়ে দেয়না প্রয়োজনে,
ধর্ষনের কোন বিচার নেই, কোন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি।
স্বার্থ ছাড়া একপাও চলেনা, সৎপথে অসুবিধে থাকলেও,
বেছে নেয় লোকেরা বিকল্প রাস্তা, উপার্জন করতে।
প্রতি পদে পদে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, কারণে অকারণে,
আমার মনের ভিতর, ভারতবর্ষের যে ছবি আছে সে অন্য।
শান্ত, স্নিগ্ধ, নির্মল, স্বচ্ছ, শস্য শ্যামলা বর্ণময় সত্যের প্রতীক
ভারতবর্ষ,
সে, রবিঠাকুরের ভারতবর্ষ, সাম্যের কবি নজরুলের।
প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের,বঙ্কিমচন্দ্রের, শরৎচন্দ্রেরও,
অক্ষর পরিচয় করিয়ে ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়।
সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন, রাজা রামমোহন রায়,
আরও কত মনিষীদের জন্মস্থান এই ভারতভূমি।
আজকের যুবসমাজ ভঙ্গুর, আদর্শহীন, কুঁড়ে প্রকৃতির,
এই ভারতবর্ষ আজ আমার কাছে অপরিচিত।
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
কবি পরিচিতি:-
আমি তনুশ্রী বসু পাত্র। বাবা চন্ডিচরণ পাত্র ও মা চিত্রা পাত্রর প্রথম সন্তান। হুগলি জেলায় চুঁচুড়াতে জন্ম। স্কুল, কলেজও সেখানেই। বিয়ে হয়েছে ১৯৮৩ সালের ২৫শে জানুয়ারী, এক মাত্র ছেলের সংসার হোয়েছে বছর তিনেক আগে। তারা যে যার নিজের কর্মস্থলে থাকে। আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী বাড়িতেই থাকি। আমি একজন সাধারন গৃহিণী। সংসারের একঘেয়েমি কাটাতে আমি লেখা ও গানের মধ্যে সময় অতিবাহিত করি। আমার স্বামী এই ব্যাপারে আমাকে অনেক উৎসাহ দেয় ও সাহায্য করে। সাহিত্যকে যারা ভালোবাসে তারা লেখার মাধ্যমে তাদের বক্তব্য অপরের সামনে রাখার চেষ্টা করে। তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে দেখা যায়। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে লিখতে ভালবাসি আর তার প্রকাশে আরও আনন্দ পাই। তাই লিখি আর লিখেও চলব।