আড়চোখে চায়
-আবুল হাসমত আলী
→→→→→
রাজপথে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে যায়,
পরিচিতরা দেখা হলে করে কুশল বিনিময়,
তারা হাসে, কিন্তু হাসিটা কৃত্রিম বলে মনে হয়,
তারা একে অপরের দিকে আড়চোখে চায় ।
অফিসে ঢোকার মুখে, একজন হাঁকে অন্যজনকে,
“এই যে মনোজবাবু ! আজ সকাল সকাল যে ?”
“হ্যাঁ অন্যদিনের মত রাস্তায় জ্যাম ছিল না আজকে,”
কৃত্রিম হাসির সাথে, তারা পরস্পরকে আড়চোখে দেখে ।
“এই যে শ্রীবাস্তবদা! আপনার কথাই ভাবছিলাম, খবর কি ?
বলুন, দুদিন আসেন নাই_ তার কারণ কি ?”
“আসুন, চায়ের দোকানে ,চা খেতে খেতে বলছি,”
ওদের শত্রুরা আড়চোখে দেখে ওদের মুখের হাসি ।
পার্কে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা ভাবাবেগে উদ্বেলিত, কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ওরা, দেখাচ্ছে ভীষণ আনন্দিত,
ওরা কানে কানে ফিসফিস করে কথা বলছে অবিরত,
কারা যেন আড়চোখে দেখছে ওদের অনবরত ।
একজন ভদ্রলোক কুটিল হেসে অন্যজনের পিছে,
একটা হিংস্র পাগলা কুকুরকে লেলিয়ে দিয়ে,
মজা দেখে, আর সামনে দাঁড়িয়ে আহা বলে ,
এসব আবার কারা আড়চোখে দেখে হাসে ।
দোকানদার তার খরিদ্দারকে আপ্যায়নে ব্যস্ত,
খরিদ্দার দোকানদারকে আপন ভাবতে অভ্যস্ত,
শেষে মিষ্টি হেসে বিল ধরিয়ে দেয় একটা মস্ত,
পাশের দোকানদার তা আড়চোখে দেখতে অভ্যস্ত ।
সে কেস খেয়ে ধর্না দেয় এক উকিলের কাছে,
উকিল সাহেব তার কেসটি সত্বর নেয় লুফে,
আর টাকার পরিমাণটা দেয় বড় করে কষে,
রফা করতে উকিল আড়চোখে চায় তার দিকে।
গরিব শিল্পীর ঘরে অর্থের প্রাচুর্য কোথায় ?
তাতে কি? সে যেমন রোজগার করে তেমনি খায়,
কিন্তু তার জীবন থাকে সর্বদা আনন্দময়,
ধনবানরা সর্বদা তার দিকে আড়চোখে চায় ।
হোটেল রেস্টুরেন্টে গাড়িতে করে আসে,
দামি দামি খাবার খেয়ে মন দেয় পানীয়তে,
নেশায় বুঁদ হয়ে শেষে তাদের গাড়িতে বসে,
কর্মচারীরা তাদের দেখে আড়চোখের দৃষ্টিতে ।
ছেলেটির পুঁথিগত বিদ্যে ভীষণ কম,
তবু সমাজে কথা বলে ঠিকঠাক একদম,
বিদ্বানরা পছন্দ করেন না তার কথা ওই রকম,
তাই তাঁরা, তাকে আড়চোখে দেখেন, রাগেন চরম ।
→→→→→
কবি পরিচিতি: পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অন্তর্গত ভাতার থানার এরুয়ার গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসমত আলী, পিত_ শেখ আতর আলী, মাতা _ইন্নান্নেসা বিবি। হাসমত আলী পেশায় একজন গৃহশিক্ষক। উনি অবসর সময়ে একটু লেখালেখি করতে ভালোবাসেন। উনি ভালোবাসেন সবুজ প্রকৃতিকে ও মানুষকে। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা উনি ভীষণ পছন্দ করেন। উনি কোনরকম ভেদাভেদ পছন্দ করেন না। উনি চান মানুষ মনুষ্যত্ব বোধের দ্বারা উদ্বেলিত হয়ে একে অপরকে মানুষের মত সম্মান করবে, মানুষের মর্যাদা দেবে। তাই যেখানে মানুষের মনুষ্যত্ব পদদলিত হয় বা নৈতিক অবক্ষয় হয় সেখানেই উনি কলমের মাধ্যমে কিছু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন। “কবিতার পাতা ” পরিবার ও উনার প্রিয় অনেক মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা উনাকে এই ব্যাপারে সব সময় প্রবল উৎসাহ যুগিয়ে চলেছেন ।