ফুলি
-ভদ্রাবতী বিশ্বাস
♠♠♠♠♠
মেয়েটির বয়স বছর সাতেক
ফুল বিক্রি করে,
সারিদিন কেটে যায় তার
পার্কে ঘুরে ঘুরে।
এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
ফুল নিয়ে ছুটাছুটি,
দু-পাঁচ টাকা পেলেই খুশী
খায় ভাত রুটি।
ক্ষুধার জ্বালায় একাজ করে
ঘরে আছে সৎ মা,
কি পেয়েছিস ফুল বিকিয়ে
আমায় দিয়ে যা।
ঘরের কোনে শোয়ার আশায়
বাকী টাকা দিয়ে দেয়,
কোন কথা বলতে পারেনা
পাছে মারের ভয়।
প্রতিদিনের মত আজো এসেছে
ফুল নিয়ে হাতে,
বিক্রি হয়নি খাওয়া হয়নি
জটর জ্বালা তাতে।
হঠাৎ এক হিংস্র জানোয়ার
খাবারের লোভ দিয়ে,
হাত ধরে ঝোপের আড়ে
নিয়ে গেল ফুসলিয়ে।
কঁচি দেহখানা ছিড়ে ছিড়ে খায়
ক্ষত বিক্ষত করে,
জ্বালা যন্ত্রনায় ছটফট করে
জানায় চিৎকারে।
রাতে ঘুমাতে পারে না
কাতরিয়ে যায় কেটে,
অসহ্য বেদনায় অবুজ শিশু
বুকটা যায় ফেটে।
পেটের জ্বালা সৎমার যাতনা
ফুলি যে নিরুপায়,
কি করবে বোঝার আগে
সবটাই সহে নেয়।
সময় পেরিয়ে একদিন সে
বড় হয়ে ওঠে,
ঘেন্নায় তাকায় নিষ্ঠুর সমাজ
ঠাই নাই জাতপাটে।
বয়সের ভারে ক্লান্ত ফুলি
অচল দেহ নিয়ে,
বিষন্ন দৃষ্টিতে আকাশ পানে
তাকায় ফ্যালফেলিয়ে।
নিয়তির বুঝি এটাই নিয়ম
ভেবে নেয় অবশেষে,
জীর্ন দেহ ক্ষুধায় কাতর
অনন্ত জ্বালা নিঃশ্বাসে।
♠♠♠♠♠
কবি পরিচিতি-
ভদ্রাবতী বিশ্বাস। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশের যশোর জেলার মণিরামপুরের মনোহরপুর আমার জন্ম। পিতা: স্বর্গীয় ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, মাতা: স্বর্গীয় নীলিমা রানী বিশ্বাস। ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে বি.এস. সি(সম্মান) এম এস সি(ভৃগোল) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করি।চাকুরী জীবনে প্রথমে টাওরা হাই স্কুলে শিক্ষাকতা করি ।কিছুদিন পর প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাই।পর পরই কেশবপুর মহিলা কলেজে সুযোগ হয়।বর্তমানে আমি এখানে সহকারি অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছি।পাশাপাশি লেখালেখি করি।কবিতা লেখা আমার খুব পছন্দ।