উদভ্রান্ত কৈশোর
-আরতী মালাকার
⇔⇔⇔⇔⇔⇔
মায়ের মমতার কোলে হেসে খেলে বেড়ে উঠা
যে শিশুকাল হারালো মাত্র ক’দিন আগে।
এভাবেই হারাবে আরো প্রজন্মান্তরে।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে তা এগোয়
কৈশোরের উঠোনে।
নতুন পৃথিবী, সবই যেন রঙিন ছবি!
কত হাসি, কত সুখ -সাথী, কত মধুর খেলা!
কত স্বপ্ন আঁকা -মুছা ভাবনার আকাশে!
কত খুশি ছড়িয়ে দেয়া ইচ্ছের বাতাসে!
নিয়ম করে পাঠে বসা,স্কুলে যাওয়া,
বিকেল হলে মাঠে ছুটা,সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার তাড়া।
এমনই তো হওয়ার কথা ছিল
জীবনের কৈশোর বেলায়।
কিন্তু তা হলো কৈ?
আধুনিকতার বিষ টুপ সংস্কৃতি
ক্রমে ক্রমেই গ্রাস করছে কোমল মেধা-মনন!
শহুরের নিষ্প্রাণ কঠিন বেষ্টনী ঘেরা
প্রাচীরের কুটুরে, নিঃশ্বাস আটকে আসছে ক্রমশ!
হারাচ্ছে খেলার মাঠ,প্রকৃতির স্নিগ্ধ স্পর্শ।
জীবন আবদ্ধ প্রযুক্তির খোপে ধ্বংসের নেশায়।
নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, নেই রাত্রির প্রশান্তির নিদ্রা!
দিন -রজনী, শুয়ে -বসে বেহিসেবী কালের ঘড়ি,
বিধ্বংসী নেশায় ছুটে নেটওয়ার্কের ঘূর্ণিপাকে।
স্নায়ু কোষে গামা তরঙ্গের বেপরোয়া
উদ্যম নিত্যের বিষ ছড়ানো খেলা।
তরুণ মগজে দখল নিচ্ছে আগ্রাসী ভায়োলেট রশ্মি!
কেড়ে নিচ্ছে কিশোর চোখের প্রখর জ্যোতি।
দৃষ্টির সামনে কেবল ভারী কাঁচের চশমার স্থাপনা।
মনন রন্ধ্রে অপ্রতিরুদ্ধ ভয়াল জগতের
ঘাটি স্থাপনের মহড়া!
যার তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে –
তরতাজা কৈশোরের রক্ত-মাংসে!
চোখের নীচে তমসার হাতছানি!
ঘুমের রাজ্যে হতাশার শানিত ছুরি!
নানা রোগ-ব্যধির ছোঁয়াছে স্পর্শে-
নিঃশ্বাস -প্রশ্বাস,ফুসফুস, হৃৎপিন্ড,বৃক্ক বিকল।
উদভ্রান্ত তনু-মনের শিরা-উপশিরায়,
সরল-সাবলীল চিন্তা -চেতনার বিকাশ গতি রুদ্ধ!
এই ঘাতক ব্যাধির সহজলভ্য আধিপত্য
ছড়িয়ে পড়েছে শান্ত পল্লীর নিভৃত কুঠিরে।
বিভীষিকার আঁধার নক্ষত্রে নিমজ্জিত
ভবিষ্যত স্বপ্ন গড়ার কৈশোরকাল!
বইয়ের পাতার পরতে পরতে
উইপোকার নিশ্চিত বসতি।
নিস্তব্ধ সকাল,দুপুর, সন্ধ্যার পাঠের টেবিল!
কেবল স্বরব নানা ডিভাইসের সোরগোল,
আর চোখ ধাঁধালো আলোর আড়ম্বরে ভরপুর অধ্যয়ন কক্ষ।
এভাবেই এগুচ্ছে প্রযুক্তির প্রজন্ম।
উদভ্রান্ত কৈশোর পা বাড়াচ্ছে যৌবনের সিঁড়ি বেয়ে-
ধরতে ধরণীর শক্ত হাল।
কেউ জানিনা,কি ভয়ংকর প্রলয়ের অপেক্ষায় আছে –
আগুন্ত ভবিষ্যৎ কাল!!
⇔⇔⇔⇔⇔⇔
কবি পরিচিতঃ
আরতী মালাকার, জন্ম ১৯৭৭সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোটাটিকর (পৈত্যপাড়া) গ্রামে। পিতাঃ নৃপেন্দ্র চন্দ্র মালাকার, মাতাঃ চুনী রানী মালাকার, শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বি.এস.সি(সম্মান),প্রাণিবিদ্যা।
এম.এস.সি(প্রাণিবিদ্যা),বিএড। পেশাঃ শিক্ষকতা(মাধ্যমিক স্কুল) নেশা/শখঃ অবসরে কবিতা ও গান শোনা, সাহিত্য চর্চা করা। বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে কাব্য চর্চার সাথে জড়িত আছি।