উন্মুক্ত শিখা

-শ্যামল কুমার মিশ্র

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

কোথা থেকে শুরু করব ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল

একটা ‘গোটা তুমি’ ফুটে উঠবে আমার ক্যানভাসে

লাল নীল হলুদ সবুজ সব রঙ মজুত

লাল রঙটা ছড়িয়ে দিলাম

সাদা ক্যানভাসে যেন রক্তবিন্দুর ছটা

টপ টপ করে পড়তে থাকলো

আমি দেখতে পেলাম ক্যানভাস জুড়ে একটা মুখ

উন্নত গ্রীবা সমুন্নত মুখ মুষ্টিবদ্ধ হাত

চিনতে আমার অসুবিধা হলো না মানুষটিকে

বড় চেনা মুখ

আর্তের যন্ত্রণায় কাতর এই মুখটাকে যে বড় কাছ থেকে দেখেছি

ক্যানভাসটা বদলে গেলে

আর একটা মুখ

ঘন কালো এক মাথা চুল

হাতে ধরা একটি ছোট্ট ছেলে

মানুষটার হাত ছাড়িয়ে দৌড়চ্ছে

চিৎকার করে উঠছেন মানুষটি–

বেশি দূরে যাস নে খোকন

ওখানে ছেলে ধরা আছে

দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বাবার কোলে

উভয়ের মুখে খেলে যায় এক অনাবিল হাসি…

ক্যানভাস জুড়ে এখন শুধু ছেলেটির মুখ

অনেক অনেক বড় সে আজ

দুচোখ জুড়ে ওর জলের ধারা

শৈশবের সেই মানুষটি আজ শেষ যাত্রায়

হাজারো মানুষের মিছিল

খেটে খাওয়া যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষ সব

সবাই একটু ছুঁতে চায়

চেনা মানুষ আজ অচেনার ভিড়ে

‘এক’ কেমন করে যেন ‘বহুধা’ হয়ে যায়…

ধীরে ধীরে ক্যানভাসটা বদলে যায়

ক্যানভাস জুড়ে শুধু একটা প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ

মৃদু বাতাসে কেঁপে কেঁপে ওঠে

জলভরা চোখে খোকন এগিয়ে যায়

দুহাতের আড়ালে বাঁচিয়ে রাখে শিখাটুকু…

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

কবি পরিচিতি:

সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোট বেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। বর্তমানে সদ্য প্রাক্তন। ছিলাম যাদবপুর নবকৃষ্ণ পাল আদর্শ শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। এপার বাংলা,ওপার বাংলার নিয়মিত লেখক। ওয়েব ম্যাগাজিনের ও নিয়মিত লেখক। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য কবিতার পাতা, প্রাঙ্গণ,শব্দনগর, দীপায়ন, কাব্যকথা, বঙ্গ সাহিত্য পত্রিকা, চতুষ্কোণ ইত্যাদি। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …

 

 

 

 

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*