তবু মনে রেখো

-শ্যামল কুমার মিশ্র

≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅

বাতায়ন পাশে বসে থাকে রঞ্জন

সফেদ জ্যোৎস্নায় চারদিক ভরে উঠেছে

রাত্রির মধ্যযামে ও ঘুম আসে না সত্তরের রঞ্জনের

নির্নিমেষে তাকিয়ে থাকে…

জ্যোৎস্না মেখে ও এগিয়ে আসছে

হলুদ রাঙা শাড়িতে চন্দ্রমা খেলা করে

কবরীতে জড়ানো বকুলের মালা

ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে মল্লিকা

সেই মিষ্টি গন্ধটা ছড়িয়ে পড়ছে..মল্লিকার গায়ের গন্ধ…

রঞ্জনের চোখ দুটো আনন্দে ভরে ওঠে

মল্লিকা হাত বাড়িয়ে দেয়

ইছামতির কূল ধরে এগিয়ে যায় ওরা

জ্যোৎস্নামাখা বালুতটে মুখোমুখি বসে থাকে

সব কথা নিমেষে হারায়…

সব আজো স্মৃতি পটে অমলিন

শান্তিনিকেতনী ব্যাগ কাঁধে ফিরত মল্লিকা

সম্ভ্রম জাগানো দিদিমণি

সদা ব্যস্ততার মাঝেও হৃদয় জুড়ে থাকত রঞ্জন

রবিবারের সন্ধ্যায় মল্লিকা গেয়ে উঠতো—

“তবু মনে রেখো যদি দূরে যায় চলে’…

চোখের পাতা দুটো কখন ভিজে ওঠে

শেষ দশ বছরে প্রাণবন্ত মানুষটা হারিয়ে যায়

প্রাণহীন জড়ের মতো বসে থাকতো

কথা হারিয়ে যায় বিস্মৃতির আড়ালে

অ্যালজাইমার্স সব কেড়ে নেয়

রঞ্জনের হাতটা নিয়ে শুধু বসে থাকত

এক গভীর নৈঃশব্দ খেলা করে…

সেদিনটাও ছিল এমনি এক পূর্ণিমার রাত

বিশ্বচরাচর জুড়ে জ্যোৎস্না খেলা করে

রঞ্জনের বুকে শুয়ে রয় মল্লিকা

এক গভীর ঘুম নেমে আসে

জানালার পাশে পাখিটা এসে শিস্ দিয়ে ওঠে

ঘুম ভেঙ্গে রঞ্জন নামিয়ে রাখে মল্লিকাকে

বুঝতে পারে মল্লিকার সুবাস কখন যেন হারিয়ে গেছে…

ওরা সবাই মল্লিকাকে নিয়ে গেল

রোজ রাতে বাতায়ন পাশে আসে মল্লিকা

রঞ্জন শুনতে পায় সেই গান–

‘তবু মনে রেখো যদি দূরে যায় চলে’…

≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅

কবি পরিচিতি:

সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোট বেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে ৩২ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …

 

 

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*