রণাঙ্গনে মেহের আলী
-মোঃ আব্দুল হামিদ সরকার
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
মুক্তিসেনা মেহের আলী, মাদুলি বাঁধা মুষ্টিবদ্ধ হাত,
ঝাকড়া চুলে বেয়ে যাওয়া মাঝির বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ।
কব্জিতে লালসালু, আঁখি ভরা সোনালী স্বপ্নের সিঁড়ি,
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আর রাজনৈতিক কবির বজ্রকথন।
আপাদমস্তকে মেহের আলীর নেচে উঠা গ্রন্থিল পেশি,
রণাঙ্গনে স্টেনগান ধরা, শত্রু হননের হুংকার।
আপ্লত মন, প্রতিবাদ আর ক্রোধের তীব্রতা,
বুড়িগঙ্গা পাড়ের দোয়াঁশ-এটেল মাটি হবে অবমুক্ত।
মুক্ত হওয়ায় পলে পলে বেড়ে উঠবে সোনালী ধানের চারা,
রণাঙ্গনে মেহের আলী, কৃষ্ণরাতে জেগে উঠা দুরু-দুরু বুক।
যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে বাবার অশ্রুঝরা আশীর্বাদ,
শহীদ-গাজী বুঝি না আমি এনে দাও বিজয় উল্লাসের পতাকা।
চোখের লোনা জল সাঁতরিয়ে দণ্ডায়মান মেহের আলী,
চোখের সামনে গুলি খাওয়া মুক্তিসেনার ছটফটে মৃত্যু।
কিন্তু আর কত? কত দিন শকুন-শৃগালের আহারের বস্তু হবে মুক্তিসেনার লাশ?
জীবন ধারাপাতে মেলেনা এর সদুত্তর।
রণাঙ্গনে মেহের আলী, বাড়ন্ত দাড়ি-চুলে ছলছলে দুটি চোখের আকুতি,
স্বপ্ন মোদের হবে না মলিন, ঐ দেখা যায় পূর্ব আকাশে সূর্যের ডগা।
মায়ের কোলে বসা শিশুর এক গাল হাসি, তিমির কেটে উঠা রঞ্জন-রশ্মি,
কুপোকাৎ হবেই এবার পাকবাহিনীর নিলজ্জ হাসি আর বেহায়াপনা।
দৃঢ় প্রত্যয়ে জাগে বক্ষদেশে যন্ত্রসংগীত, কারার ঐ লৌহ কপাট,
রণাঙ্গনে মেহের আলী, ভুখ লাগা পেট, নাহি তার কোন ভ্রুক্ষেপ।
বাংলা মায়ের নোলক কেড়ে নেওয়ার দুঃস্বপ্ন-
কামান, রাইফেল গ্রেনেডে গুড়িয়ে দিবো তাদের স্বপ্নের পাঁজর,
টা-টা গুলি মাথা ছুঁয়ে পড়লো অদূরে,
ইস্পাত-কঠিন মেহের আলী, তবুও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে বিভোরে।
রণাঙ্গনে মেহের আলী, বাংলার নওজোয়ান বীরদর্পে হয় আগুয়ান,
দু’হাত দূরে সহযোদ্ধার কব্জি উড়ে যাওয়া হাতে জয় বাংলার আওয়াজ।
হঠাৎ গুলি এসে মেহের আলীর বুক চিরে হলো একাকার,
কণ্ঠনালী তখনো সতেজ, ছাড়ে না জয় বাংলার স্লোগান।
বোমা, অগ্নি, গুলি পশ্চাতে ফেলে স্বপ্ন হলো আরো সু-গভীর,
করতোয়া, আত্রাই, মধুমতি আর ইছামতির জল হলো রক্তবর্ণ।
বিজয় নিশান আসছে ঐ, পড়ে রইলো মেহের আলীর কম্পমান দেহ,
দোআঁশ, এটেল, বেলে মাটিতে রক্তাক্ত লাশ ক্ষীণকন্ঠে জয় বাংলার আওয়াজ।
চলে গেলো মেহের, শহীদের চাদরে আচ্ছাদিত হলো তার দেহ,
জয়ের ঢাক, বিজয় উল্লাস, জমিনে থাক-থাক রক্তের ছাপ।
ঘুমাও মেহের আলী, চেয়ে দেখো বাংলার সোনালী দিগন্ত,
যায়নি বৃথা, তোমাদের রক্তে হয়েছে স্বাধীন বাংলার সুপ্রভাত।
রণাঙ্গনে শহীদ মেহের আলী, তোমরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান,
ডিসেম্বর এলে তোমাদের স্মরণে গেয়ে উঠি বিজয়ের গান।
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
কবি পরিচিতি:-
জন্ম:- কবি আব্দুল হামিদ সরকারের জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী দেলুয়া গ্রামে,পহেলা ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে। পিতা মৃত আফতাব উদ্দিন সরকার ও মাতা মৃত মোাছাঃ হামিদা খাতুন। লেখা-লেখি:- তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হল “স্মৃতির দোলনা” (আত্মজীবনীমুলক) (২০১৪) ১ম গ্রন্থ, “প্রেমের সুনামী” (২০১৫) ২য় গ্রন্থ, “ভালবাসার রংধনু” (২০১৬) ৩য় গ্রন্থ, “মধ্যরাতের হাসি” (কিশোর ছড়াকাব্য) (২০১৭) চতুর্থ গ্রন্থ, “দূর আকাশের নীহারিকা” (২০১৮) পঞ্চম গ্রন্থ, “রক্ত কাজল” (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস) (২০২০) ৬ষ্ঠ গ্রন্থ এবং “লুুৎফা” (নারীজাগরণমূলক উপন্যাস) (২০২২) ৭ম গ্রন্থ। পেশা:- তিনি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলাধীন নারী শিক্ষা উন্নয়নের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বেলকুচি বহুমুখী মহিলা ডিগ্রী কলেজের, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের, একজন সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।