বর্ণের প্রত্যয়ে
-বিজয়া মিশ্র
∞∞∞∞∞∞∞∞∞∞
ভাষা সম্মানে গর্জে ওঠা সেই অমর একুশে
আগ্নেয়াস্ত্রের বিপরীতে তাজা তরুণ দের নিরস্ত্র অভিযান
কে জানতো শুধু মাতৃভাষার আবেগের তীব্রতা এত দুঃসাহসী!
প্রতিটি বর্ণ এক একটি বর্ষার বলা হয়ে বিঁধবে দুর্বৃত্তদের!
ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা প্রথম সূর্যের আভায়
প্রত্যেক একুশের মত মত এবারও
রক্তে লেখা বর্ণমালা ছুয়ে
ডানা মেলে উড়ে গেল একটি ধবধবে সাদা কবুতর।
ওর ডানার মৃদু শব্দে ঝ’রে পড়া দুএকটা জীর্ণ পাতা
আড়াল করলো একুশের বেদিতে সাজানো বর্ণগুলো
যেন ঠিক মায়ের আঁচল গায়ে ঘুমিয়ে থাকা শিশু।
আব্দুল চাচা আবছা হয়ে যাওয়া চশমার কাঁচটা
যতবার মুছে নিচ্ছে
ততবারই ঘোলাটে হচ্ছে ক্ষীণ দৃষ্টি
বরকত, জব্বারদের নাম লেখা মুক্ত বেদীতে
হাত বুলাতে বুলাতে বিড় বিড় করে কী যেন বলছে!
ফুলে ফুলে সুসজ্জিত শহীদদের গায়ে
আপন মনে খসে পড়া পলাশ যেন কেঁপে উঠে
থেমে গেল শেষবার।
একদল ছেলে মেয়ে নতশিরে দাঁড়িয়ে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা…
” গানে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে চলেছে ধীর লয়ে
ওদের দৃষ্টিতে ফুটে উঠছিল বর্ণময় প্রতিজ্ঞা ,
হাতের শক্ত হয়ে যাওয়া মুঠিতে অদ্ভুত এক প্রত্যয়ের আলো ঠিকরে পড়ছে যেন
অনিমেষ দষ্টিতে উদ্ভাসিত এক একটি বর্ণে গড়া
শব্দ মাল্য দিয়ে ওরা ব্যক্ত করছে রক্তের ঋণ
মিঠে বাংলা বুলি যেন বৈদিক উচ্চারণে মিশে যাওয়া আজানের সুর …
∞∞∞∞∞∞∞∞∞∞
কবি পরিচিতি:
আমি বিজয়া মিশ্র। আদি নিবাস পূর্ব মেদিনীপুরের একটি গ্ৰামে। গ্ৰাম্য উন্মুক্ত পরিবেশের বৈচিত্র্য মাঝে আমার বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া এবং লেখালেখির সূত্রপাত ।স্কুল শেষ ক’রে কলেজ, বাংলা বিভাগে স্নাতক,জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং-সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এড, এবং অন্যান্য কিছু ডিপ্লোমা, ডিগ্ৰী ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন বেঙ্গল থেকে সোস্যাল স্টাডিজ নিয়ে পড়াশুনা, মেডিকেল এরিয়ায় শিক্ষিকা ও অন্যান্য পদে অন্ততঃ পনের বছর অতিবাহিত ক’রে বর্তমানে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরতা এবং কলকাতার যাদবপুরে বসবাস করি।