মুক্তির পথ
-শ্যামল কুমার মিশ্র
≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅
এই ই রক্কে রক্কে
চিৎকার করে কন্ডাক্টার—বইমেলা, বইমেলা
বাসের পেটটা নিমেষেই খালি হয়ে যায়
হাজারো মানুষের ভিড়
সবাই বইমেলামুখী..ছোট বড় সবাই
চায়ের দোকানের কাপ প্লেট ধুতে ধুতে আনমনা হয়ে যায় বিশু
ওর বয়সী কত ছেলে মেয়ে বাবা মায়ের হাত ধরে চলেছে চোখে মুখে একরাশ আনন্দ…
কোথায় যেন তলিয়ে যায় বিশু
হাজারো মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যায় কালো কালো অক্ষরের সমুদ্রে
বিশু দেখতে পাচ্ছে মাতলার তীরের সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়
ছেঁড়া জামা প্যান্টে চলেছে একটি সাত আট বছরের ছেলে
গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছে ছেলেটি
পীতাম্বর স্যার মাথায় হাত রেখে বলছেন—
মন দিয়ে পড়ো বাবা,
এর কোন বিকল্প নেই।
ছেলেটি সোৎসাহে পড়তে থাকে–
‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে
কর্মী হওয়ার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই রে’…
ও! বিদ্যাসাগরের পো!
এদিক পানে আইস…
মালিকের চিৎকারে সম্বিত ফেরে বিশুর
দৌড়ে এসে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়
রাত নটায় ছুটি হয় বিশুর
বইমেল ফেরৎ লোকজন চলেছে
ঝুপড়িতে যাওয়ার আগে
বড় তোরণটার দিকে তাকিয়ে রয় বিশু
বড় বড় হরফে লেখা “রবীন্দ্র দুয়ার”
দূর থেকে সার সার বই দেখা যায়
নতুন বইয়ের গন্ধ বড় ভালো লাগে বিশুর
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে
তোরণের গায়ে লেখা—
বইকে ভালবাসো, বইয়ের মাঝেই তোমার মুক্তি…
ধীরে ধীরে পা ফেলে এগিয়ে যায়
মনে ভাসতে থাকে সেই কথাটা–
বইয়ের মাঝেই তোমার মুক্তি…
≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅
কবি পরিচিতি:
সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …