বৌঠান

-শ্যামল কুমার মিশ্র

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

বৌঠান, তোমায় আজ ভীষণ মনে পড়ছে

আকাশ জুড়ে লাল আলোর বিচ্ছুরণ

আলোর বিভায় প্রোজ্জ্বল গঙ্গাবক্ষ

মৃদুমন্দ বাতাস খেলা করে

ঢেউয়ের মাঝে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে তোমার মুখ

অনেক ব্যথা অনেক যন্ত্রণার অভিব্যক্তি যেন

অস্ফুটে আমি গেয়ে উঠছি —

‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’…

তারপর থেকে একটা দিনও ভালো নেই

অনেকবার গেছি ওই গঙ্গাবক্ষে

লাল রঙ ছড়িয়ে সূর্য ডুবছে

আমি ডুবে যাওয়া সূর্যকে খুঁজে চলেছি

নদীর গভীরে কোন এক অস্তরাগে

বৌঠান,এক বুক অভিমান নিয়ে চলে গেলে তুমি

“আমি সাধারণ মেয়ে

গরিব সাধারণ এক কর্মচারীর মেয়ে

তোমাদের রীতিনীতি আভিজাত্যে বড়ই বেমানান এই গাঙ্গুলী কন্যা

আমার প্রেম, ভালোবাসা, দাম্পত্য তাই বড়ই ফেলনা

তাই না, ঠাকুরপো”?

নিরতিশয় অভিমান ঝরে পড়ত তোমার দু চোখে

ছাদের ঘরটাতে তুমি গড়ে তুলেছিলে এক মিথ্যা সংসার সব ব্যথা বুকে নিয়ে তুমি চলে গেলে…

পরের দিন ঠাকুরবাড়ির অলিন্দে একটা কাক এসে চিৎকার করলো

ছাদের বুকে ছাতিমের যে ডালটা নেমে এসেছে

বউ কথা কও পাতার আড়ালে কান্নায় ভেঙে পড়ল

ঠাকুরবাড়ির মানুষজন কেমন যেন যন্ত্র চালিতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে

এখানে ওখানে কাজের লোকেরা ফিসফিস করে কথা কইছে

প্রশস্ত বারান্দা জুড়ে এক গভীর নীরবতা

শুধু পশ্চিমের বারান্দার কোণের ঘর থেকে একটা চাপা কান্নার আওয়াজ

শব্দের যেন বাইরে আসার অধিকার নেই…

শব্দহীন এক নৈরাশ্যের জগতে আমার নিত্য গতায়াত

ছাদের ঘরটা আমায় আর ডাকে না

অযত্ন লালিত ছাদের দোপাটি ফুলগুলো

ওরা যেন সারা দিনরাত কারুর অপেক্ষায় থাকে

রাত গভীর হলে ছাদটা যখন জ্যোৎস্নায় ভরে ওঠে

ছাদের অলিন্দে আমি তোমার গায়ের গন্ধ পাই

তুমি যেন বলছো– ঠাকুরপো, সেই গানটা গাইবে?

আমি গেয়ে চলেছি—

‘তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে সুপ্ত রাতে… ‘

আমার দু চোখে তখন জলের ধারা…

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

কবি পরিচিতি:

সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …

 

 

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*