কল্লোলিতা তিস্তা
-বিজয়া মিশ্র
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
আমি তিস্তা, বহুলচর্টিত সেই শীর্ণকায়া
দক্ষিনের পাহাড়ঘেরা গহন অরণ্যরাজির অন্তর্লোকে
এগিয়ে চলেছি এঁকে বেঁকে।
দীর্ঘ পথের মাঝে মাঝে হিমশীতল বরফ ধারা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।
শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি নিয়ে পরিবারের বন্ধনে
তোমরা আমায় আপন ক’রে নিয়েছ কতভাবে।
জীবন প্রবাহের কথকতায় সেই সুদীর্ঘ কাল ধ’রে
দেখেছি কত ওঠা পড়া,কত কান্নাহাসির কলকল্লোল।
একদিন আমায় তোমরা বেঁধে রাখলে প্রাচীরে
সমস্ত তরঙ্গ হারিয়ে একলা হওয়ার কান্না
গুমরে কত কাঁদলাম পাথরের বুকে।
জাল ফেলে ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুদের কেড়ে নিলে কতবার।
আমার কানে বাজে মানুষের তৃষ্ণার্ত কন্ঠস্বর
উষর, নিষ্ঠুর চাষহীন ক্ষুধার্ত মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারিনি প্রচন্ড খরায়।
কারা যেন ভাগ ক’রে নিতে চায় আমার জলরাশি
চিরকালের জন্য
আসলে তোমরা কোনদিন জানতেই চাওনি আমার নীরব যন্ত্রনা।
তারপর একদিন আমার শাখায় এলো হড়পা বান
তোমরা তখন শারদীয়ার বিসর্জনে মত্ত।
হঠাৎ উত্তুঙ্গ হিংস্রতা শতশত উজ্জ্বল প্রাণ ভাসিয়ে নিয়ে চলল প্রবল টানে।
প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, প্রতিরক্ষার কাছে মাথা নত হল সেদিন।
না খুশি হইনি আমি একটুও
যারা আমার লালনে পুষ্ট তাদের জন্য আমি ব্যথাতুরা
তোমাদের কান্নার সাথে মিশে গেল আমারও বেদনা ধারা।
আমি বয়ে চলি তোমাদের আনন্দধারায়
আমি বুকে ধরে রাখি তোমাদের তৃষ্ণার অমৃতসুধা
আমার গর্ভ ধারণে উৎসারিত হয় তোমাদের অর্জন ।
ভালো থেকো জনবসতি, ভালো থেকো উদার সত্তা
ভালো রেখো…
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
কবি পরিচিতি-
আমি বিজয়া মিশ্র। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গ্ৰাম্য আবহে জন্ম,পরিবেশের মুক্ত হাওয়ায় লালিত।বর্তমানে কলকাতাবাসী ।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষায় স্নাতকোত্তর। লেখালেখি,আবৃত্তি,বক্তৃতা, সঞ্চালনা,লেখালেখির সূত্রপাত বিদ্যালয় জীবন থেকেই,শিক্ষিকাগণের উৎসাহে।চরম দারিদ্রের মধ্যেও সব বাধা টপকে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা আশৈশব পায়ের তলায় মাটি খুঁজে নিতে সাহায্য করেছে। বাংলা ভাষা ছড়াও চিকিৎসা বিষয়ক একটি শাখায় স্নাতক হিসেবে শিক্ষা সম্পূর্ণ ক’রে দীর্ঘদিন চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষকতা,পরে স্কুল শিক্ষায় যোগদান -সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় পথচলা ভাবনার রসদ যুগিয়েছে,যুগিয়ে চলেছ।প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাই আমার কবিতা,গল্প ও অন্যন্য লেখার উপজীব্য। নমস্কার, ধন্যবাদ।