শ্যামা সনে শ্যামা

-শ্যামল কুমার মিশ্র

∞∞∞∞∞∞∞∞

শ্যামাকে তোমার মনে পড়ে মাস্টার?

সর্দারের কথায় উদাস চোখে তাকায় মাস্টারমশাই

চোখের সামনে ভেসে ওঠে অষ্টাদশী শ্যামাঙ্গিনীর মুখ

দোহারা চেহারা,শ্যামবর্ণা,নিটোল কালো দুটি চোখ চাঁদপানা মুখটাতে সর্বক্ষণ হাসি ঝরে পড়ত শ্যামার হাতে-পায়ে চঞ্চল শ্যামা আসত মাস্টারমশায়ের ঘরে

সব কাজ সেরে চঞ্চলা হরিণীর মতো

ফিরে যেতে সুবর্ণরেখার তীর ধরে

মাঝে মাঝে শাল মহুয়ার জঙ্গলে পাখির সাথে দুষ্টুমি করত

কখনো বা কাজ শেষে বিরসা মুন্ডার কথা জিজ্ঞাসা করত

জিজ্ঞাসা করত দ্রৌপদীর কথা

লাঞ্ছিতা দ্রৌপদীর যন্ত্রণা ফুটে উঠত ওর দুই চোখে

সক্রোধে প্রশ্ন করত– এত এত বীর ছিল কেউ-ই দ্রৌপদীরে বাঁচাইল না ?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে শ্যামা উঠে যেত

ওর দু’চোখে জলের ফোঁটা চিকচিক করে উঠত…

সেদিনটা ছিল এমনি এক শ্যামা পূজার দিন।

ঘরদোর জুড়ে আলপনা দিয়েছিল শ্যামা

সাঁঝের বেলায় উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল দীপের আলো

গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বিদায় নিয়েছিল শ্যামা…

শালপিয়ালের আঁধার ফুঁড়ে ধেয়ে এলো কয়েকটি হিংস্র হায়না

ছিন্নভিন্ন করে দিল ওর শরীরটা

কয়েকবার অস্ফুটে চিৎকার করল শ্যামা

তারপর হারিয়ে গেল চিরতরে…

রাত গভীর হয়,

শ্যামা ঘরে ফেরে না।

মণ্ডপে মন্ডপে কারণবারির ফোয়ারা

সর্দার সনে পিতা খুঁজে ফেরে শ্যামারে

মাস্টাররে জিজ্ঞাসা করে– শ্যামা কুথায় মাস্টার?

সবাই মিলে আলো আঁধারী পথে খোঁজে শ্যামারে

মাস্টারের টর্চটা বনের প্রান্তে শালগাছের গোড়ায় গিয়ে পড়ে

চিৎকার করে ওঠেন মাস্টারমশাই— শ্যামা…

চোখদুটো বোজা, ঠোঁটের প্রান্ত দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে

নগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে শ্যামা

গায়ের চাদরটা দিয়ে শ্যামাকে ঢেকে দেন মাস্টারমশাই

বাবা বসে পড়ে নিথর দেহটার পাশে

দিকে দিকে ঢাকের শব্দে তখন শক্তির আরাধনা চলছে মাইকে ভেসে আসছে–

“শ্যামা, এবার ছেড়ে চলেছি মা!

মায়ার মায়া কাটিয়ে এবার

মায়ের কোলে চলেছি মা”।।

∞∞∞∞∞∞∞∞

কবি পরিচিতি:

সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ ..

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*