হারিয়ে গেল কথামালা
-তনুশ্রী বসু (পাত্র)
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
আজ ভাইফোঁটা আনন্দের উৎসব
সবার আনন্দ চোখেমুখে আনন্দের ছায়া
আমার চোখে জল কেন জানো?
আমার বোন হারিয়ে গেছে, পড়ে আছে মায়া।
কেউ ছিলনা মেয়েটার, অনাথ পরিচয়হীন
কাজ করতো আমার কাছে কোয়ার্টারে
আমি একা মানুষ কত কথা বলত সে
শুরু করলে থামতেই চায়না একেবারে।
দেখতে বেশ মিষ্টি গায়ের, রঙ দুধে আলতা
মুখটিও বেশ, ভীষণ চঞ্চল, আর সদাই হাঁসি
জিজ্ঞাসিলাম “কে তোর বাবামা, জানতে ইচ্ছে হয়না?
বললে “কি হবে যেনে, আছে অনাথআশ্রমের মাসী।”
প্রতিবছর আমাকে ফোঁটা দিতে আসত
সঙ্গে আনত নানারকমের সুন্দর ফুল
বলেছিল “দাদা কিদেবে আমায় ভাইফোঁটাতে
আমার কিন্তু চাই কানের সুন্দর দুল।”
ভীষণ তাড়াতাড়ি কথা বলতো সেজন্য আমি
ওকে “কথামালা” ছোট করে “কথা” বলে ডাকতাম
কথা আমাকে বইদাদা বলে ডাকতো
আজ সেই ভাইফোঁটা গত তিনবছর ওকে চিনতাম।
বসে আছি কথা আসবে ফোঁটা দেবে
বেলা দুটো বেজে গেলো এখন এলোনা
চিন্তা হচ্ছে হল কি মেয়েটার এমন তো হয়না
একটু দূরেই বস্তিতে থাকে মিথ্যা কথা বলেনা।
খানিক বাদে খবর পেলাম দীঘির ধারে
পড়ে আছে এক মেয়ের লাশ বিবস্ত্র
সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম কে এই মেয়ে?
দেখে বাকরুদ্ধ, এ যে খুব পরিচিত একান্ত।
পকেটে আমার “কথামালার”কানের দুল
পানপানা মুখ, টিকল নাক,ভরা রূপের ডালা
এ কেমন বিচার ঈশ্বর ধর্ষণকারীরা উধাও
চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল ছোটবোন “কথামালা।”
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
কবি পরিচিতি :-
সাহিত্যকে যারা ভালোবাসে তারা লেখার মাধ্যমে তাদের বক্তব্য অপরের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে। তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে দেখা যায়। হুগলি জেলায় চুঁচুড়াতে জন্ম, স্কুল কলেজও সেখানেই। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই। আমি একজন সাধারন গৃহিণী। লিখতে ভালবাসি আর তার প্রকাশে আরও আনন্দ পাই। তাই লিখি আর লিখেও চলব।