পদ্মার কাছে নতজানু

-মীর সেকান্দার আলী খোকা

⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃

গ্রীষ্মের এক রাত

মগদুম দরগাহ্ ছুঁয়ে পদ্মা পারে

দাঁড়িয়ে আছি

এক ফালি জোছনা চমক

কড়ই গাছের ডালপালা ভেদ করে

আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে

লুকোচুরি ছলে দু’এক কদমে

ঠিক কড়ই গাছের নিচে দাঁড়ালাম

একটু দূরে

শুকনো পদ্মায় ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে

জোনাকি খেলছে

এত রস

তবুও কোথায় যেন নিরস নিরস ঝংকার

ঝিঁ ঝিঁ শব্দের সাথে

কি যেন বেদনার ডাক আমায় পীড়া দিল

শূন্য শূন্য ফাঁকা ফাঁকা

এখন যেন লুকোচুরির সময় না

অস্থির হলাম, হাঁটছি

জোছনা আর জোনাকি

তুমুল মেতেছে চড়ে

মনে হল (পদ্মায়) গাঙে জোয়ার এসেছে।

আমি নিঃশব্দে তীরে বসেছি

আমার দু’হাত নিচে পানি ফেলছে।

ভাবলাম অনেক তৃপ্তিতে পান করবো,

হাত বাড়িয়ে

উবুর হয়ে পড়েছি

পানি নেই, হাতের সাথে উঠে এলো একরাশ বালি।

অশ্রু ঝরলো

রাগে ক্ষোভে

পদ্মা তুমি মরীচিকা দিলে!

পদ্মা আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে

বলে, আমি মরীচিকা দিইনি

তুমি তো মানুষ সত্য কথাটি বল

আমি নিরুপায় উত্তর নেই

চোখে জল নেমে এলো।

পদ্মা আমাকে কিছু না বলে বিস্তীর্ণ চর দেখিয়ে বলে

এই আমি মরু প্রান্তর।

আমি নিশ্চুপ দেখছি

দূরে কোথাও কিছু কাশবন

সামান্য জলর‍্যাক টেনে পদ্মা চলছে।

ভাবছি-

যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এক সময় বিপুল জলরাশি সাথে

আসতো কুমির, খেলত হাঙর, ভাসতো তরী, হাসতো ইলিশ

আজ শূন্য সবি,

শুধু ধূ ধূ বালুচর

পদ্মা নামে জেগে আছে স্মৃতি।

হঠাৎ পাখির তানে ধ্যান ভেঙে এলো

স্বর্গের দিকে দৃষ্টি দিয়েছি কোথাও একটি তারাও জেগে নেই

চাঁদ ডুবে গেছে

জোনাকিরা মৃদু রশ্মিতে এখানে সেখানে বসেছে।

আমি দু’এক কদমে চর ছাড়ছি,

পদ্মা আমার ডান তর্জনি ধরে টানছে

এত ভালোবেসেছে।

আমি মানুষ, লজ্জিত, ন্যায্য প্রেম দিতে ব্যর্থ-

বলল, তোমার ভোর এসেছে, চলে যাবে,

আমার প্রভাত কবে আসবে ?

শির নিচু হয়ে এলো

এক ফোটা অশ্রু ছেড়ে নিঃশব্দে চর ছাড়লাম।

⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃⊂⊃

পরিচিতি-

পেশা:চাকুরী, অবসরের প্রস্তুতি চলছে।

জন্ম: ১৫-০৬-১৯৬৬ ইং

১ নং ওয়ার্ড, মাদ্রাসাপাড়া, পৌরসভা, দক্ষিণ সারান্দর,

ঠাকুরগাঁও সদর।

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*