শৈশব নেই শৈশবে
-মোঃ আসাদুজ্জামান আসলাম
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
শৈশবের সেই দিনগুলো আর কেউ রাখেনা মনে
মাঠে ঘাটের আম কুড়ানো সবাই গেছে ভুলে।
সবাই এখন ঘুমায় সুখে বড় দালান কোঠায়
টিনের চালে বাদুড় রাতে বাদাম নাহি ফেলায়।
কেউ ছুটেনা দল বেধে ওই রসের চুরির নেশায়
সবাই এখন ঘরে বাইরে ফোন চালানোর পেশায়।
হায়রে মোরা কপাল পোড়া মরছি ধুঁকে ধুঁকে
কৈশোর বেলার সেই সময়টা ছিলো কত সুখে।
জামে অধর নীল করে সব কেউ খেলেনা মাঠে
কেউ খেলেনা এক্কাদোক্কা বসে না কেউ পাঠে।
বাড়ির পাশে হাটের মেলা বসেনা বিকেল বেলায়
রোজ বিকেলে সবাই এখন ব্যাস্ত ছবি তোলায়।
ঘুড়ির সুতো কাঁটার লড়াই নেই’তো মাঠে মাঠে
পায়েস খায় না রাতে এখন ধানের ক্ষেতে বসে।
কেউ শোনে না পুঁথি পড়া যায় না যাত্রা পালা
গানের সাথে তাল মেলাতে বাজায় না কেউ থালা।
এখন আর কেউ সুর তোলে না ভাটিয়ালি গানে
মাঝি এখন পাল তুলে গান গায় না খুশি মনে।
জেলে এখন পায়না ইলিশ বড় নদীর মাঝে
পাখিদের নেই কিচিরমিচির সূর্যি ডোবা সাঝে।
নতুন পানির মাছ ধরা আজ নেইতো গ্রামে গঞ্জে
সবই এখন দৃশ্য শুধু জাদুঘর আর মঞ্চে।
নেইতো এখন ছেচড়ি কাটা সিক্ত জলের পাড়ে
সবাই এসব করে এখন চড়ে খেলনার কারে।
কেউ শোনে না কারো কথা চলে যে যার মতো
স্মৃতি সবই যাচ্ছে মুছে ছিলো আগে যতো।
তাঁরার দিকে হাত উঠিয়ে ডাকে না কেউ আয়রে
এখন আর কেউ টিপ পড়েনা কপালে ওই চাঁদ’রে।
শালিক পাখি, ঘুঘু পাখি কেউ খুঁজেনা বনে
বাচ্চা আনতে টিয়ের ঠোকর এখন খায়না কানে।
পেঁচা ডাকার শব্দ এখন পাইনা বাড়ির কোণে
কেউ এখন আর শিশ মিলায়না কুহুমন্দ্রের সনে।
এখন তো আর যায়না দেখা হরিণ ওয়ালা টাকা
মাঠগুলো সব ভবন ঘেরা নেই তো একটু ফাঁকা।
সবাই এখন এসি রুমে হৈচৈ শূন্য উঠোন
আগের মতন কেউ করেনা অসুস্থতায় যতন।
নৌকা বাইচ হয়না তো আজ শরৎ ঋতু এলে
শেষ বিকেলের ঘোড়ার দৌড়ে উচ্ছ্বাস নাহি মেলে।
নেইতো এখন বৈশাখের সেই হালখাতারি মিষ্টি
অলস সময় কাটিয়ে আজ ডায়বেটিসের সৃষ্টি।
ঝুম বৃষ্টিতে ফুটবল খেলা নেই তো ছোটো বেলার
সবাই এখন নিত্য নতুন মগ্ন অনলাইন খেলার।
নেই তো এখন মায়ের হাতের গরম পিঠার মজা
পাগল সবাই ফ্রিজে রাখে খাবার নকল তাজা।
নেই তো এখন হাডুডু আর লুকোচুরির খেলা
কেউ ভাসায় না জলে এখন ছোট্ট কালের ভেলা।
উঠোন কোণে পাটি লেছে চাঁদের আলোয় বসে
গল্প করার সেই স্মৃতি আজ নেইকো মানস পটে।
শৈশবের সেই স্মৃতি ভরা নেই তো মধুর শৈশব
সবাই এখন কৃত্রিম রোবট প্রাণোচ্ছলের অভাব।
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
কবি পরিচিতি-
মোঃ আসাদুজ্জামান আসলাম
বিবিচিনি, বেতাগী, বরগুনা।