খুকু
-শ্যামল কুমার মিশ্র
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
তোমার কথা আজ খুব বেশি করেই মনে পড়ে মাস্টারমশাই
আজ যে শিক্ষক দিবস
সকাল সকাল পৌঁছে যেতুম তোমার কাছে
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলতুম—
“আজ আর পড়া নয়”
“আজ শুধুই দুষ্টুমি!”
আমি হেসে ফেলতুম
তুমি আমার মাথায় হাত রেখে বলতে—
তুই কি আর বড় হবি না খুকু?
বড় আমি হতে চাই না মাস্টারমশাই
আমি তোমার খুকু হয়েই থাকতে চাই
কেমিস্ট্রি পড়ার ফাঁকে
বায়না ধরতুম আচার খাওয়ার
কাকিমাকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসতে আচার
বলতে—তাড়াতাড়ি খেয়ে নে
না হলে এক্ষুনি কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে যাবে…
যদিও তুমি জানতে কুরুক্ষেত্র কোনদিনই হবে না
কাকিমা তাঁর অবসরে আমায় কাছে ডেকে নিয়ে বলতেন–তুই কবে বড় ডাক্তার হবি খুকু
আমি যে তোর অপেক্ষায়…
আজ তোমার খুকু বড় হয়েছে মাস্টারমশাই
অনেক বড়
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ওয়াশিংটন ডিসি তোমার খুকু অনেক বড় হয়ে গেছে…
জানো মাস্টারমশাই!
তোমার খুকুর বয়সটা সেই একত্রিশে আটকে গেছে
গলায় স্টেথোস্কোপটা ঝুলছে সেই প্রথম দিনের মতো
ও যেন তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর বলছে–
আমি বড় হয়েছি মাস্টারমশাই
জীবনের থেকে বড়, অনেক বড়…
হাতে ধরা ছবিটার উপর
টপটপ করে জল পড়তে থাকে
মাস্টারমশাই সামনে দেখতে পান
সেই ছোট্ট মেয়েটিকে
হাতে ধরা রক্তগোলাপ, শিক্ষক দিবসের উপহার…
চিৎকার করে ওঠেন মাস্টারমশাই
তুই যাসনে খুকু, যাস নে
ধীর পায়ে খুকু যেন কোথায় হারিয়ে যায়
প্রতিধ্বনি ফিরে ফিরে আসে
যাস নে খুকু, যাস নে…
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
কবি পরিচিতি:
সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …