নারী বিলাস

– সত্যজ্যোতি রুদ্র

♣♣♣♣♣

হে রমণী! তোমারে লভিতে–

কত জীবনের ঘটে ছন্দপতন,

কত সাম্রাজ্যের ঘটলো পতন,

কতজন মামলা-মোকদ্দমায় হয়েছে ফতুর,

কত প্রেমিক তৃষিত বক্ষে লালসে প্রেমাতুর,

কত প্রাণ, নিমেষে হয়েছে বলিদান!

রিপুর তাড়নায় তাড়িত হয়ে চলে অবিরাম!

পৌরুষত্ব দেখায় মনকাড়া,

শৌর্য-বীর্য প্রদর্শনের মহড়া!

তুমি যখন পঞ্চপান্ডবের পাঞ্চালী!

তোমাকে পাওয়ার উন্মাদনায়

ঘটে কুরুক্ষেত্র রণ।

তুমি যখন রঘুপতির পরম মিতা!

সতী-সাধ্বী রমনী সীতা,

তোমাকে পাওয়ার অদম্য বাসনায়,

লংকার রাজাধিরাজের লোলুপ দৃষ্টি তায়!

অবেশেষে লংকাকান্ড! হলো সবই লণ্ডভণ্ড।

একদিকে কুরুবংশ অপরদিকে যদুবংশ,

একদিকে সুরের ঝংকার

অপর দিকে অসুরের হুংকার!

তুমি যখন গ্রীক পুরাণের দুর্বোধ্য

কিংবদন্তী চরিত্র- হেলেন অব ট্রয়!

প্রেমের আগুণে পুড়ে ছাই হওয়া

নগরী ছাড়া আর কিছুই নয়।

রমনী! তুমি –হৃদয় তন্ত্রের

মন্ত্র-মুগ্ধ অমর গাথা প্রেমকাহিনী,

তোমায় জব্দ করতে চলে দুরভি-সন্ধি।

পুরুষের হৃদয় তন্ত্রে তন্ত্রে,

লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলে

মনস্কামনার অজস্র ধারায় সিক্ত হবার মন্ত্রে।

ধন-দৌলত, মনি-মানিক্য,অশন-ভূষণ

হউক দুষ্প্রাপ্য সম্পত্তি

কিংবা মহৌষধী সঞ্জীবনী শক্তি,

যত অর্থ বিত্ত সহায় সম্বল

সব কিছুর বিনিময়ে উপভোগ্য

মনলোভা অবলা নারীর ঋজু সৌন্দর্য!

নারী! তুমি অপরূপ সাজে সেজে আছো

পুরুষের মনোরঞ্জনে!

রূপের সায়রে ভাসালে যৌবন,

ভাসিয়ে দিলে পুরুষের সমস্ত আয়োজন।

কেউ মেতে রয় পাশা খেলার ছলে-

কেউবা ক্যাসিনোর আসরে,

কেউ মত্ত চিত্ত বিনোদনে

অহরহ অহর্নিশি দিশিদিশি

কামনায় সিক্ত ভোগবিলাসী বাসরে।

চপল-চঞ্চলা হরিণীর মতো,

শ্বাপদসংকুল পরিবেশে নিজেকে উৎসর্গ করার নিমিত্তে ঠাঁই হয়েছো কুলটালয়ে!!

তুমি ছাড়া রাজমুকুট,হৃদয়ের তাজমহল

বড়োই বেমানান!রাজ দরবারে

সঙ্গীতের জলসা ঘরে রূপে টলমল

অঙ্গভঙ্গিমা,তোমার ঘুঙুর পায়ে নৃত্যের

ঝনঝনানি বড়ই রসাত্মক উপঢৌকন।

পেয়ালাভরা রঙিন রস মঞ্জরীর ঢক্ ঢক্

শব্দের লহরী, আবেগাপ্লুত ভাব-বিহ্বলে

টালমাটাল,

কোমল নেত্রে বিউগল বিহাগী কিংবা ভৈরবী সুরের মূর্ছনায় ব্যাকুল চিত্ত বড্ড বেসামাল!

তুমি গীতিময় কাব্য –ছন্দময় বাণী,

তুমি মানসে প্রতিমা–হৃদয়ের রাণী।

নন্দিত কথার শ্রুতি-শ্রাব্য ;পুঁথি-পুরাণ,

সঙ্গীত লহরী আর জীবনের কলতান!

তুমি নব নব রূপে কান পাতা হিয়া,

রতনভূষিতা রঞ্জিতা রম্য রমনীয়া ।

তুমি ধন্যা, শ্রেষ্ঠা -তুমি অনন্যা,

রমনী-জননী-জায়া,ভগিনী,কন্যা।

যত আচার-সমাচার তোমার জন্য।

কেউ পূজে মনের কোনায়,

কেউবা জাগে বিবশ বাসনায়।

কেউবা নিবেদন করে সর্বস্ব দিয়ে,

জীবন-যৌবন, প্রেম বিকিয়ে।

তোমার হৃদি সিংহাসনে মনুষ্য দেবতা

লুটোপুটি খেলে পরশ নিতে,

যুগের সঞ্চিত যত জঞ্জাল

প্রেম বন্যায় ভাসিয়ে দিতে,

চায়,হৃদয় মরুর তাপদগ্ধ বালুচর

অশ্রুধারায় সিক্ত করতে।

অবশ্যই, যে তোমাকে রেখেছে পরম আদরে

মনের মনিকোঠায় ;প্রেমের নন্দিত বাসরে,

যে তোমাকে দেখেছে দেবীরূপে,

যে তোমার শরণাগত মাতৃপূজায়–

দীপ-ধূপ,গন্ধে-পুস্পে,

তোমাকে পেয়েছে যে,প্রেমময়ী সম্পত্তি রূপে–

তখনই তার পরম প্রাপ্তি ঘটেছে।

♣♣♣♣♣

কবি পরিচিতি-

সত্যজ্যোতি রুদ্র, সহকারী শিক্ষক, চকোরিয়া,কক্সবাজার। অধ্যক্ষ, স্বরলিপি মিউজিক সেন্টার। কন্ঠ শিল্পী,গীতিকার ও সুরকার,বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন। পিতা–প্রয়াত শিক্ষক ব্রজেন্দ্র মোহন রুদ্র ।বর্তমান ঠিকানা– উপজেলা–চকোরিয়া,

জেলা-কক্সবাজার।

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*