
তুই বলেছিলি তাই
-বিজয়া মিশ্র
⇔⇔⇔⇔⇔⇔⇔⇔
বেশ তো বলেছিলি
আসবি কদিন বাদেই যখন ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে
ঘাটের ধারে মৌরলার ঝাঁক
হেলেদুলে জানান দেবে ডিম ছাড়বার
ঠিক তক্ষুনি ছাকনি জাল নিয়ে যাবো দুজনে
গামছা মাথায় চাপিয়ে নিঃশব্দে…।
কাঠের উপর দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করবি ওদের ঝাঁক
আর খপাৎ করে জাল ফেলে দিবি টান
সেই সেদিনের মতো ভাঙা বালতিতে
রাখবি ছটপটে রুপোলি আদর মাখা অনেক মৌরলা চুনোপুটি আর দু চারটে চিংড়ি ।
আর তারপর মায়ের হাতে বানানো বাটিচচ্চড়ি দিয়ে
কাড়াকাড়ি গরম ভাত…
সেই কবেকার বন্ধুবেলার আনন্দদিন!
এখনো বৃষ্টি আসে পদ্ম পুকুরের জল উপচে
মন্দির ঘাটের ডুবে যাওয়া কাঠ ভাসতে ভাসতে অনেক দূর
ঠিক তোর মতোই
শীতলপাটির সোহাগ ভুলে
আচারের তেলগন্ধ হাতখানা চাটতে চাটতে গল্পের মৌতাত
ভুলে গেলি আসবি বলে অঘ্রাণের ঘ্রাণে
ন্যাড়াপোড়ার মাঠময় নাড়া জোগাড়ের দায় নিয়ে দাঁড়ালি না দরজায়
পৌষ সংক্রান্তির পিঠে পুলি হাতে
হঠাৎ কুড়িয়ে আনা একমুঠো বকুল ফুলের গন্ধ উপহার দিতে এলি কই!
আমি কুড়িয়ে রাখি অদম্য সংলাপ টাটকা জলছবি
সবটুকু ভালোবেসে
শুধু তুই বলেছিলি তাই…
⇔⇔⇔⇔⇔⇔⇔⇔
কবি পরিচিতি-
বিজয়া মিশ্র পাহাড়ীর জন্ম পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উত্তর কোটবাড় গ্ৰামে।পিতা স্বর্গীয় মুক্তিপদ পাহাড়ী ,মাতা স্বর্গীয়া মাধবীলতা পাহাড়ী।প্রকৃতির শ্যামলিমায় গ্ৰাম্য পরিবেশের মুক্ত হাওয়ায় আশৈশব লালিত। নিত্য দারিদ্র, আশেপাশের কিছু মানুষের প্রাত্যহিক বিরূপ মনোভাব,কোনঠাসা করার প্রয়াস মিথ্যে করে বড় হয়ে ওঠা।একমুঠো ভাত জোগাড়ে আশৈশব লড়াই চিন্তা চেতনাকে পুষ্ট করেছে। বর্তমানে কলকাতাবাসী ।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষায় স্নাতকোত্তর। লেখালেখি,আবৃত্তি,বক্তৃতা, সঞ্চালনা,লেখালেখির সূত্রপাত বিদ্যালয় জীবন থেকেই,শিক্ষিকাগণের উৎসাহে।চরম দারিদ্রের মধ্যেও সব বাধা টপকে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা আশৈশব পায়ের তলায় মাটি খুঁজে নিতে সাহায্য করেছে। বাংলা ভাষা ছড়াও চিকিৎসা বিষয়ক একটি শাখায় স্নাতক হিসেবে শিক্ষা সম্পূর্ণ ক’রে দীর্ঘদিন চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষকতা,পরে স্কুল শিক্ষায় যোগদান -সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় পথচলা ভাবনার রসদ যুগিয়েছে,যুগিয়ে চলেছে।প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাই কবির কবিতা,গল্প ও অন্যন্য লেখার উপজীব্য। নমস্কার, ধন্যবাদ।