
কুজ্ঝটিকা
-শ্যামল কুমার মিশ্র
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
সকাল থাইক্যা চিৎকার কইরা কইরা
বানান পড়তাছে রিনি
‘ঐক্য-বাক্য- মাণিক্য’ র ঝড় তুইলা
একটা বানানে আইসা আটকাইয়া গ্যাছে
বারেবারে উচ্চারণের চেষ্টা করে
কিন্তু বানান আর মুখে আইসে না…
রিনি দৌড়াইয়া ঠাম্মার কাছে আইসে
ঠাম্মারে শুধায়– এটা কী বানান ঠাম্মি?
সস্নেহে ঠাম্মি তাকায় নাতনির হাতে ধরা বইয়ের পাতায় মৃদু হাসি খেলে যায় ঠাম্মির মুখে
‘এ হইল কুজ্ঝটিকা নাতিনী…
চারিদিকেই তো কুজ্ঝটিকা আজ
মানুষের জীবন আজ বড় কঠিন হইছে মা
ডাক্তার মাইয়াটা কেমন কইরা যেন হারাইল
হারাইল কৃষ্ণনগরের ওই ফুটফুটে তামান্না
দুচোখ জলে ভইরা ওঠে ঠাম্মির
হাত জোড় কইরা প্রণাম কইরা কয়–
মাইয়া লোকের এমন মুক্তি তো
তুমি চাও নাই বিদ্যেসাগর
তোমার কুজ্ঝটিকা আজ আর শুধু বইতে নাই
মানুষের মনে, শাসকের চিন্তায়…
জানো বিদ্যাসাগর!
কয়েক দশক পার হইল
মেয়েদের জন্য কত স্কুল হইল,কলেজ হইল
কিন্তু মনের কুজ্ঝটিকা আজও ঘুচল না
তোমার জন্মদিনে কিংবা মৃত্যুদিনে
নেতারা আইসে
কত কথা হয়, শব্দের তুফান ছুটায়
কুজ্ঝটিকা আর ঘোচে না…
‘তুমি কাঁদস কেন ঠাম্মা’
সম্বিত ফিরলে ঠাম্মা কয়–
ও কিছু নয় মা
ঐক্য হারাইয়াছে বাক্যের ঝাঁপিতে
কুজ্ঝটিকায় আমার চোখ দুটো তাই
ঢাকা পড়েছে মা…
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
কবি পরিচিতি:
সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …