শেষ চিঠি

-বিনয় জানা

∼∼∼∼∼∼∼∼∼

অনেকদিন পরে আজ উঠে বসেছি,

চোখের তারায় ভাসলো তোমার মুখোছবি!

মনে হল মুখোমুখি হলে শক্তি পাবো!

তাই লিখছি তোমায়। কষ্ট করে পড়ো!

আমি জানি, ভীষণ ব্যস্ত তুমি, তবু,

ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় দিও!

না না বেশি সময় দিতে হবে না,

চিঠিটা পড়তে যেটুকু সময় লাগে!

জানো-ডাক্তারবাবু জবাব দিয়েছেন,

খুব বেশি হলে আর তিন মাস। তারপর…

শোনো, অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি বুকে,

শুধু তোমাকে বলতে চাই! শুনবে না?

আমি বুঝি, আমাকে ছাড়া কার চলবে,

আবার বুঝতে পারি-কার চলবে না!

আমি যত্ন বুঝি, অযত্ন-ও বেশ বুঝি।

তাই আর নয়। ডাক পড়লেই চলে যাব!

আমি জানি-আমার চিঠি পড়ার পর,

তোমার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হবে! হবেই

যে যুদ্ধে পক্ষ-প্রতিপক্ষ দুই-ই তুমি,

যে যুদ্ধে হুঙ্কার নেই, নেই অস্ত্রের ঝঙ্কার!

যে যুদ্ধে রণসজ্জার দরকার হয় না,

হয় না কারও রক্তপাত!

তবুও ক্ষত হয়। অসহ্য যন্ত্রণা হয় ক্ষতে!

যে যুদ্ধে যোদ্ধা কাঁদে, অথচ অশ্রু ঝরে না!

আমার এ চিঠি পড়লে তুমি ঠিক বুঝবে,

আমি এখনো স্বপ্ন দেখি! রাতে নয় দিনে!

গাঢ় ঘুমের গভীরে অবচেতনে নয়,

স্বপ্ন দেখি-দিনের আলোয়! সচেতন ভাবে!

আমি স্বপ্ন দেখি-তুমি এসেছো, হাত ধরে

হাঁটছো আমার পাশে হলদি নদীর পাড়ে!

খিলখিলিয়ে হাসছো আনন্দে, উল্লাসে!

আসবে? আসবে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে?

আমি জানি-শত বাধার জগদ্দল প্রাচীর,

পাহাড়ের মতো ঘিরে রেখেছে তোমায়!

ভেঙে দিয়ে সেসব প্রাচীর আসো একবার,

শুনে যাও জমানো সব কথার রাশি!

এ আমার শেষ চিঠি জেনো, অনেক কষ্টে,

অনেক যন্ত্রণায় লিখেছি! আর হয়তো…

পড়ার পর দেরি করো না! এসো কিন্তু,

দেরি করলে হয়তো আপসোস রয়ে যাবে!

∼∼∼∼∼∼∼∼∼

কবি পরিচিতি:

নাম: বিনয় জানা পিতা: ঈশ্বর সুধীর চন্দ্র জানা মাতা: ঈশ্বরী অন্নপূর্ণা দেবী গ্রাম : বাড়সুন্দ্রা পোস্ট: ঈশ্বর দহ জালপাই জেলা: পূর্ব মেদিনীপুর পশ্চিমবঙ্গ, ভারত কবিকে কবি না বলে পাঠক বলাই সমীচীন। কারণ-কবি মূলতঃ পাঠক। সবার লেখা পড়তে পড়তে মাঝেমাঝে কিছু লেখার ইচ্ছা করে। তাই, কবি তার কর্মজীবনে যে সব নুড়ি পাথর কুড়িয়ে পেয়েছে সেগুলোর কাব্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে মাত্র। সবার ভালো লাগলেই কবি খুশি হয়।

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*