মা

-শ্যামল কুমার মিশ্র

◊◊◊◊◊◊◊◊◊

ভোরের আলো সবে ফুটছে

পাখির গানে চারিদিকে মুখরিত হচ্ছে

মীরা বোষ্টমী গেয়ে চলেছে—‘রাই জাগো,রাই জাগো বলে’

তুমি তখন উঠোনে তুলসী তলায়

জীবনের সমস্ত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে প্রক্ষালনে ব্যস্ত…

নিভৃতে নিরালায় সবার অগোচরে…

তোমায় আজ বেশি বেশি করে মনে পড়ছে মা

জীবনের অপরাহ্ণ বেলায় এসে ফিরে দেখি সময়কে

সব মুখ হারিয়ে গেছে…

শুধু চেয়ে থাকে একটি মুখ

দুচোখে গভীর করুণা মাখা প্রসারিত দুই বাহুতে তুমি ডাকছ—

চলে আয় খোকা, আমি আজ ও তোর প্রতীক্ষায়…

রোজ রাতে তোমায় বেশি করে মনে পড়ে মা

তোমার ঘুম পাড়ানি গানে আমার শৈশব জেগে থাকে

ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমিরা এসে কথা কয়

ফিসফিসিয়ে বলে—-ঘুমো খোকা…ঘুমো…

আমার ঘুম ভেঙে যায়

যন্ত্রণাক্লিষ্ট হৃদয় চিৎকার করে ওঠে—মা! তুমি যেও না…

হাসিমুখে তুমি অভয় দিয়ে বলো—না রে খোকা! আমি কি যেতে পারি

আমি তো লুকিয়ে আছি তোরই গভীরে

তোর শোনিতে শোনিতে চিন্তার পরতে পরতে

শান্ত হও, পূর্ণ হও, তাকাও গভীরে…পাবে আমায়… তোমার শেষ আশ্রয়…

ক্লান্ত অবসন্ন আমি শুয়ে থাকি পৃথ্বীর কোলে

নিরন্তর খুঁজে চলি সেই নির্ভরতা

চোখমেলে দেখি অনেক মা— হারানের মা, পালানের মা, আরশাদের মা…

আমি নির্ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ি মায়েদের কোলে…

◊◊◊◊◊◊◊◊◊

কবি পরিচিতি-

পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে ৩২ টা বছর কেটে গেছে। ছাত্রদের মাঝে খুঁজে পাই প্রাণের আরাম। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের”। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া….

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*