পাখির ইতিকথা

-সালাম মালিতা

∼∼∼∼∼∼∼∼∼

একটা সময় খুব ভোরে উঠে

ছোট-বড় সবাইকে জাগানোর কাজ ছিল,

আজ অবশ্য এসবের দরকার পড়ে না

নিত্য নতুন অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে।

নিজেদের প্রয়োজন অন্যভাবে মেটানোয়

বাড়ির আঙিনায় আমাদের প্রবেশ নিষেধ!

ফুল-ফলের ক্ষতিকারক পোকামাকড়

যাদের আমরা খেয়ে ফেলে রক্ষা করতাম,

সেসব পোকার অস্তিত্বও প্রায় বিলীন

আধুনিক কীটনাশকে তাদের দেখা নেই।

তাইতো আজ খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়ে

আমাদের অনেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায়!

বেশিরভাগ গাছ আজ বন্ধ্যা

দামি ঔষধ প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না,

ফুলের মকরন্দ সংগ্রহ বন্ধ হওয়ার দরুন

পরাগায়ন কমিয়ে দিয়েছি।

বাসস্থানের সংকট, খাদ্যের ঘাটতি

শিকারের কারণে, আমাদের সংখ্যাও সীমিত!

আমাদের আগে সাফাই কর্মী বলা হত

আজ অবশ্য সব যন্ত্র দিয়েই কাজ হয়,

তবে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্টের জন্য

এই যন্ত্রই দায়ী, আমরা কিন্তু নয়!

ইট-পাথর আর কংক্রিটের রাস্তায়

আমাদের একটু বসবার সুযোগ নেই,

অশুভ বলে তেড়ে আসে মারতে!

আমাদের গান শুনে আগে বসন্ত কাটত

এখন অবশ্য আতসবাজিতে পালিত হয়,

প্রকৃতির সঙ্গে নির্জনতা ভালো লাগে না

তাই শব্দদূষণেই উৎসব করে।

আমাদের কণ্ঠের মিষ্টতা অপছন্দ হওয়ায়

খাঁচায় বন্দী করে কন্ঠরোধ করে!

শীতের সময় দলেদলে শত মাইল পাড়ি দিয়ে

আগেকার দিনে উড়ে আসতাম,

আজ স্থানীয়দের অস্তিত্বের হুমকি শুনে

আসাটা কমিয়ে দিয়েছি।

রঙবেরঙের আমাদের দেহের জৌলুস কমে

প্রকৃতির রোষে ধূসর হয়েছে,

নিজেদের সংখ্যা কমতে কমতে ভুলে যাচ্ছি

আমরাও পৃথিবীতে ছিলাম!

সময় থাকতে পৃথিবীকে রক্ষায়

বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি আমাদেরও বাঁচতে দিন,

নয়তো এমন একটা সময় আসবে

যখন প্রাণহীন অট্টালিকা পড়ে থাকবে-

কিন্তু জীবের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না!

∼∼∼∼∼∼∼∼∼

কবি পরিচিতি- 
নাম : সালাম মালিতা

গ্রাম : নাগোরপোতা

পো : উলাসী

থানা : হাঁসখালী

জেলা : নদীয়া

পিন : ৭৪১৫০২

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*