অণুগল্প-
ভাবনায় কতকিছু
-সেলিম আলতাফ
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
আজ থেকে তার কাছে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল। অপারেশন শেষে দুটো চোখ ঢেকে দিয়েছে সাদা ব্যান্ডেজ আর তুলোয়।এখন থেকে সপ্তাহ দুই এমনটাই থাকতে হবে। কোন ক্রমে দেখার কোন অনুমতি নেই। এখন তার জীবন বেঁচে থাকতেও আঁধার পূর্ণতা। কাউকে ইচ্ছে করলেও দেখা যাবে না কিছুতে।
এই শরতে আকাশ হয় কত শান্ত বর্ণিল রূপায়ন। জানা অজানা কত পাখি ওড়ে আনন্দ অনুভবে। উচ্ছ্বাস বাতাস কাশবনে কি সুন্দর লুটোপুটি খায়। গাছে গাছে সারারাত ধরে ফোটে শিউলি সৌরভ।
এই সব কিছু আর দেখা হবে না মন চাওয়ায়। আস্বাদন হবে না পৃথিবীর অপরূপ রূপ মাধুরি। চাইলেও নদীর কাছে যেয়ে সূর্যাস্ত দেখা হবেনা। তার লালচে আভায় গাছের পাতা, নদীর জলে আলতো ছোঁয়ায় নিজেকে ভাসানো হবেনা আর।
তার আরো কতকিছু দেখার আছে সারা দিনমান। এই চমৎকার জগতে অনিন্দ্য সুন্দরতা সীমাহীন। সে আজ বোঝে চোখ না থাকলে অর্থহীন জীবন। এখন তার আশঙ্কা আবার সব দেখতে পাবে তো? ডাক্তার অবশ্য বলেছে কোন সমস্যা হবেনা। তারপরও কেন যেন একটা অজানা আশঙ্কা তাকে ভয় দেখাচ্ছে থেকে থেকে হঠাৎ হঠাৎ। যদি তাই হয় তবে তার বেঁচে থাকার কি মানে হবে? কি করে একরাশ অন্ধকার নিয়ে সে চলাফেরা করবে তার প্রিয় পৃথিবীতে? কিছুই যদি দেখতে না পায় তাহলে বুঝবে কি করে কতটা সৌন্দর্য বা কতটা নিষ্ঠুরতা কোথায় কোথায় ছড়িয়ে আছে?
অনেক প্রশ্ন ভীড় করছে তার মন ঘরে। এরমধ্যেই একটা কথা ভেবে তার অশান্ত মন অনেকটা শান্তি পাচ্ছে। অন্তত আর যাইহোক তার প্রিয় কোকিল কুহুতান সে শুনতে পারবে।
এটার জন্য দেখার প্রয়োজন হবে না।
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
লেখক পরিচিতি-
সেলিম আলতাফ, খুলনা, বাংলাদেশ