নদী ও নারী
-শ্যামল কুমার মিশ্র
≈≈≈≈≈≈≈≈
আজ বেশ কয়েকদিন প্রায় কিছুই লিখতে পারিনি। লিখতে গেলেই ভেসে উঠছে ফেলে আসা শৈশবের দিনগুলো যে দিনগুলোতে তুমি ছিলে আমার প্রাণের আরাম,চেতনার স্বস্তি।তোমার ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হুগলি নদী। মাঝে স্টীমারের ভোঁ তে আমার ভোর হতো। আমি একবার তোমার দিকে, আর একবার নদীর দিকে তাকাতাম। তুমি যেন কখন নদী হয়ে যেতে। আমি তোমায় ছুঁয়ে থাকতাম। নদী এসে কত কথা বলে যেত। আমি তোমার তীরে বসে গেয়ে উঠতাম জীবনের গান। একটা দমকা হাওয়া এসে আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিত। আমি অপলোকে তোমায় দেখতাম তোমার চুলগুলো উড়তো। তুমি ধীরে ধীরে নদীর বুকে নেমে যেতে। আমি চিৎকার করে উঠতুম। তুমি মুখ ফিরিয়ে মৃদু হেসে নদীতে মিলিয়ে যেতে। একটা বাতাস কেঁদে কেঁদে ফিরত। আমি বারে বারে চিৎকার করে উঠতুম –তুমি যেও না প্রিয়। আমি অবচেতন মনে শুয়ে রইতুম তোমার বুকে। কানে ভেসে আসতো তোমার কণ্ঠস্বর। তুমি বলতে–নদী তো নারীর আর এক নাম। তুমি অবগাহন কর, দেখবে কী ভীষণ তৃপ্তি! আমি ছুঁয়ে রইলুম তোমায়। তুমি আমায় ঘিরে গান গাইতে শুরু করলে। নদী নর্তকী হয়ে উঠল। ওর নিক্বনে যেন নতুনের সুর। আমি ঐ সুরে হারিয়ে গেলাম। আমার মনে হতে লাগলো– আমি কি জীবন মৃত্যুর ওপারে চলে যাচ্ছি? প্রবাহমান সময় ফিসফিসিয়ে বলল– আমিই তো তোমার সেই নারী, সেই আবাল্যের প্রেম..আমিই তোমার সেই নদী..চলো ফিরে যাই ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে। আমি তোমার সাথে হাঁটতে থাকলাম। হুগলি তখনো বয়ে চলেছে।
≈≈≈≈≈≈≈≈
লেখক পরিচিতি:
সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …
অসাধারণ রচনা শৈলী। ভালো লেগেছে।