কল্পনার প্রতীক্ষা

-ডি এম ইব্রাহীম হোসেন

∞∞∞∞∞∞∞∞∞∞∞

শরতের জ্যোছনা প্লাবিত রাত। অদুরের মন্দির থেকে ধ্বনিত হচ্ছে ঢাক- ঢোল, বাদ্য-বাজনার মিষ্টি সুর-ঝংকার। ক’ দিন। থেকে মহা-ধুমধামে চলছে শারদীয় মহোৎেসব।

নতুনত্বের মহাসমারোহে আর নানা রঙের বিজলী ঝলকে ঝলমলিয়ে উঠেছে পূজামন্ডপ। আঙিনা-ভর লোকে লোকারণ্য। দূর দূরান্ত থেকে আগত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও প্রবীনদের ভীড়ে চারদিক হয়ে উঠেছে মুখরিত। চলছে হরেক রকম খাদ্য সামগ্রী ও নানা জিনিষপত্র বেচাকেনার তুমুল আয়োজন।

দীর্ঘ একটা বছর প্রতীক্ষার পর ঠাকুরকে এক নজর দেখে নিজেকে সৌভাগ্যবান করার এ-ই তো একমাত্র মক্ষম সুযোগ! এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিই তো চির হতভাগ্য, ঠাকুরের অবাঞ্চিত ও ক্রোধের পাত্র! তাইতো সহজে কেউই এমন পাপিষ্ঠ হতে চায়না !

ক্রমে রাত গভীর হয়ে চলেছে। এমন শুভক্ষণে কল্পনার.. চঞ্চলা-মন আরও উতলা হয়ে উঠেছে। কিছুতেই একান্তে-নির্জন কক্ষে তার ঘুম আসছে না। সে যে আজ নিষ্ঠুর কৌলীন্য সমাজের ভাগ্যহীনা, বঞ্চিতা এক নারী! ঠাকুরের সুপ্রসন্ন ললাট দর্শনে নিজেকে সৌভাগ্যবতী করার সুযোগ তার কোথায়? এ যে তার সাজেনা !!

কল্পনা বার বার ছুটে যায় পাশে আয়নার সামনে। এলো মেলো চুলগুলো চিরুনী করে সাজিয়ে ভাঁজ ভাঁজ করে রাখে। আবার নিজেকে আলোর সামনে আয়নার স্বচ্ছতায় বার বার পরক্ষ্য করে দেখে- সে কি আগের মতই সুন্দরী আছে; না কি ইতিমধ্যে চেহারাটা ঝলসে গেছে !!

হাতের কাছ থেকে লোশান তুলে নিয়ে আলতো ভাবে কয়েকবার সে মুখে ঘঁষে, কিন্তু বার বার অবাধ্য অশ্রুতে তা’ লেপটে যায় !

কল্পনা কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করতে পারেনা। অস্পষ্ট কান্নায় তার বুকটা বার বার উঠানামা করে ! ফ্যাল ফ্যাল নেত্রে সে আয়নার স্বচ্ছতার গভীরে কেবল চেয়েই থাকে! হৃদয়ের শুভ্র পর্দায় বারবার দোলা দিয়ে যায় তার !

এমনি এক শরতের জ্যোছনা প্লাবিত রাতে, শারদীয় মহাৎেসবে কাঞ্চনের সাথে তার দেখা হয়। তারপর দু’টি মনের জানাজানি, কাছাকাছি, আরও গভীর পরিচয়। কিন্তু না, কাঞ্চনের সঙ্গে তার শুভ পরিণয় সম্ভব হয়নি ! নিষ্ঠুর সামাজিক বর্ণ বৈষম্যের কুঠার-আঘাতে সব কিছুই তছনছ হয়ে যায়! ঝরে যায় কাঞ্চন, হৃদয়ের গহীন থেকে বৃন্তচ্যুৎ হয়ে, কলঙ্কের বোঝা নিয়ে !

তারপর নিষ্ঠুর শ্রেণী বিদ্বেষ আর কৌলিন্যতায় পিষ্ট হয়ে এক সময় নিঃশ্চিহ্ন হয় সে পাপিষ্ঠ ধরাধাম থেকে চিরতরে !

কল্পনা আজ একা! সম্পূর্ণ একা!

কাউকে সে আর জীবন পথের সঙ্গি করেনি! তার

ধারণা- জীবন বৃন্তে ফুল ক

ফোটে কেবল একবারই,, ঝরে গেলে সে ফুল-

কক্ষনো আর ফোটে না!

তাই আজ বঙ্গ জননীর মন্দির-কুঞ্জে যখন

ঠাকুর দর্শনে সবজনে মহাব্যস্ত; তখন কল্পনা- তার আয়নাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ওগো ঠাকুর…. মা দুর্গা, আমি যে তোমার অবাঞ্ছিত কন্যা, কৌলিন্য

বিবর্জিতা! তোমার দর্শনে ধন্য হওয়া আমার যে সাজে না ‘মা ! এ যে মহা

অন্যায়, মহা পাপ! আর সে পাপকে আগলে ধরেই আমি হতভাগি চির-বন্দিনী, অভিশপ্ত এ কারাগারে !!

তুমি আমাকে ক্ষমা কর মা, ক্ষমা কর… , বলো মা, তুমি কি একটু করুনা করবে? দেবে কি তুমি আমার কাঞ্চন

কে ফিরিয়ে আমার বুকে ? মুক্তি পাবে কি হাজারো কল্পনা নিষ্ঠুর এ সামাজিকতা, বর্ণ বৈষম্যতা (শ্রেণী বিদ্বেষ) ও কৌলিন্যতার করাল গ্রাস

থেকে কোনদিন… ? তব অর্চনা-স্তুতি যে বৃহৎ হিন্দু-গোষ্ঠীর সর্বস্তরের

সবজনেই করে! একই বিধানে যারা তোমার স্মরণ করে, তুমি তাদের

সমান চোখে দেখনা?

তোমার করুনা প্রতীক্ষায় কত দিন আর প্রহর গুনবো

মা !! তব ভক্ত মর্ত্যবাসী যে বড় ক্লান্ত!! একটু দয়া কর মা দয়া কর….!!!

∞∞∞∞∞∞∞∞∞∞∞

লেখক: ডি এম ইব্রাহীম হোসেন

শিক্ষক: রাস্তা গহর আলী আলিয়া মাদ্রাসা।

ইউনিয়ন: সাগরদাড়ী,

থানা: কেশবপুর,

জেলা: যশোর

বাংলাদেশ।

জন্ম তারিখ: ০৩/০৩/১৯৬৯ ইং

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*