টান

-অনন্যা পাল সেনগুপ্ত

⇔⇔⇔⇔⇔⇔⇔

আজ তিনদিন হলো ব্রতীন কাজের জন্য পাটনা গেছে, বাড়িতে তিস্তা মেয়েকে নিয়ে একা আছে। হঠাৎ ই রাত এগারোটার সময় মেয়ের জ্বর এলো,এতো রাতে কি করবে ,কাকে ডাকবে ভেবে পেলো না তিস্তা , থার্মোমিটার এ র পারদ চার ছুঁই ছুঁই,

মেয়ে টার এতো জ্বর,মাথায় জলপট্টি দিলে ভালো হতো মনে মনে এই কথা চিন্তা করতে করতে শুনলো “ও তিস্তা তুমি একটা বাটিতে করে জল আনোতো, কাপড়ের টুকরো আমি নিয়ে এসেছি, আমার সোনা কে জলপট্টি দিতে হবে,না হলে ওর জ্বর কমবে না”

মেয়ের জন্য চিন্তা মগ্ন মা এক বাটি জল নিয়ে আসে।দিদিভাই অর্থাৎ শাশুড়ির মা নিজে হাতে জলপট্টি দিতে লাগলেন।আর সেটা দেখে তিস্তা নিশ্চিত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,যাক যখন দিদিভাই মেয়ের দেখভাল করছে তখন মেয়ের জ্বর এই কমলো বলে। কারণ খুব অল্প বয়সে বিধবা দিদিভাই এর হাতে অনেক বাচ্চা মানুষ হয়ে গেছে, বাচ্ছা দের অসুখে বিসুখে ,রান্না করে খাওয়াতে ,কোন কাজেই দিদিভাই এর জুড়ি মেলা ভার। বসে বসে কখন জেনো তিস্তা র চোখ লেগে এসেছিল, হঠাৎ দিদিভাই এর ডাকে তার ঘুমের ঘোর কাটতে কাটতে শুনলো”নাও তোমার মেয়ের জ্বর একদম নেমে গেছে আর জ্বর আসবে না,একটু যত্ন করো মেয়েটাকে”

কথা টা কানে আসতেই ধড়মড় করে উঠে পড়ে তিস্তা দেখলো মেয়ে র মাথায় জলপট্টি দেওয়া কিন্তু দিদিভাই কোত্থাও নেই। তিস্তা দিদিভাই কে ডাকতে গিয়ে মনে পড়লো আজ দুই বছর হলো দিদিভাই আর নেই ,১২ই জুলাই মারা গিয়েছিলেন আর আজ সেই ১২ই জুলাই। মেয়ে র মাথায় কিন্ত সাদা কাপড়ের জলপট্টি,যে সাদাটা তিস্তা র চেনা কারণ ঐরকম সাদা কাপড় কাচা র পর নিজের হাতে কেচে বেশি করে উজালা দিয়ে দিতো তাই সাদার ভাব টা একটু অন্যরকম,ঠিক সেই অন্যরকম উজ্জ্বল সাদাকাপড় মেয়ের কপালে। এতটুকু ভয় না পেয়ে দিদিভাই এর প্রতি হাত জোড় করে তিস্তা বললো”দিদিভাই আমি আর কোনদিন ও মেয়ের জন্য চিন্তা করবো না,

আমি জানি তুমি তোমার সোনাকে ছেড়ে থাকতে পারতে না,আজ ও পারোনি তাই তুমি এসে ওকে সুস্থ করে দিলে, তুমি আমার প্রণাম নাও”।

ঘড়ির তখন ঢং ঢ করতে জানান দিলো রাত এখন দুটো। এবার নিশ্চিন্তে মেয়ের পাশেই মাও শুয়ে পড়লো।

⇔⇔⇔⇔⇔⇔⇔

  • #লেখিকা_পরিচিতি
  • কলকাতায় জন্ম হলেও আমার ছোটবেলা কেটেছে বিদ্যানগর নামক একটা গ্রামে। পরবর্তীতে পড়াশোনা সবই কলকাতায় এবং বর্তমানে বৈবাহিক সূত্রে আমি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে থাকি। শিক্ষাগত যোগ্যতায় ইউনিভার্সিটির দোড়গোড়ায় পৌঁছালেও বিবাহ নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোনো সম্ভব হয়নি। সাহিত্যের আঙিনায় এক নামহীন বর্নহীন কলম যে তার নিজের ইচ্ছেয় চলে। এই যাত্রাপথের শৈশব এখনও পেরোয়নি, লেখালেখি মূলতঃ মুখবইতেই সীমাবদ্ধ যদিও আমার লেখা কয়েকটা ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছে। কবি বা লেখিকা হিসাবে নয়, একজন প্রকৃত সাহিত্য প্রেমী হিসাবে পরিচিতি পাওয়াই লক্ষ্য। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়েই এই পথচলা এবং সেই উদ্দেশ্যেই একটা সামাজিক সংস্থা “ছোট্ট প্রয়াস” এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সমাজের বুকে যদি ছোট্ট একটা দাগ রেখে যেতে পারি তবে আমার জীবন সার্থক।

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*