বল্টু
-রাজীব কুমার দাস
∞∞∞∞∞∞∞∞
প্লাটফরমে রাতের ট্রেনটাও আজ অভিমানে, যাওয়ার নাম নেই। অবশেষে শেষ ট্রেন চলে গেলে বল্টু ঝটপট তার বাবা-মায়ের ছবি এঁকে ফেলে। দুটো ছবির মাছখানে বসে বল্টু সারাদিনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো বর্ণনা করে। সকলে তাকে টোকাই বলে তিরষ্কার করে, দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয় সেটাও বলে। তারপর যে কথাটা বলে সেটা মনের গহীনে ছিল লুকানো বহুকাল। যা অভিমানে ও ভয়ে কারোকাছে প্রকাশ করেনি।
‘মা আমারে কেন তুমি ময়লায় ফালায়া দিলা, কেন তোমার কাছে রাখলা না। সবাই কয় আমি নাকি অন্যের পাপ তাই আমারে আমার বাপ-মায় ফালায়া গেসে। আচ্ছা মা সত্যি কী আমি পাপ মানুষ’
বল্টু কিছুক্ষন চুপ থাকে তারপর আবার বলে-
‘পুলিশ চাচায় কইসে মানুষ কখনও পাপ হয় না পাপ হয় তার কর্ম আমি নাকি আল্লাহর শ্রেষ্ট মানুষ, পাপ মানুষ না।’
আবারো কিছুক্ষন চুপ থাকে তারপর বলে- জানো মা- আমীনের মায় কয় মানুষ নাকি মার পেটে জন্ম নেয় তারপর দুনিয়াতে আইসা পড়ে। আচ্ছা মা পেটে কী ঘর আছে?’ কথাটা বলার পর কিছুক্ষন চুপ থাকে তারপর বলে- ‘আচ্ছা মা তোমার ঘরে জায়গা নাই এইজন্য আমারে ময়লায় ফালাইয়া গেসো? তোমার ঘরে জায়গা না থাকলে আমারে তোমার পেটের ঘরে রাখলা না কেন?’
কথাগুলো বলতে বলতে বল্টুর চোখ বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে অশ্রু কিন্তু সে কাঁদছে না। মায়ের প্রতি ভালোবাসার বিপরীতে তার অভিমানের জায়গাটা ছিলো প্রবল। সে জানে উত্তরগুলো তার মা ব্যতিত আর কারো কাছে নেই অথচ মা তার আজও অজানা। একটা কল্পনা যাকে ফ্লোরে আঁকা ছবিটায় খোঁজে এই এগারো-বার বছরের শিশুটা। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্তিতে শরীর ঢলে পড়তে চায় তাই মায়ের আঁকা ছবির একপাশে বস্তার ভিতর অর্ধেক শরীর ঢুকিয়ে সে শুয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিরব অশ্রু। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে। শুন্য প্লাটফরম জেগে আছে, জেগে আছে সোডিয়াম বাতি, ফ্লোরে আঁকা ছবিটাও জেগে আছে শুধু শুয়ে আছে বল্টু অঘোর ঘুমে। পরদিন সকালে সুইপার প্লাটফরম ঝাড় দিতে এসে বল্টুকে ডাকে কিন্তু সারাশব্দ নেই। সেদিন সকালে জেগেছিল সকলে শুধু জাগা হয়নি বল্টুর।
∞∞∞∞∞∞∞∞
কবি পরিচিতি-
জন্ম ৩১ ডিসেম্বর এক মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারে। বাবা সরকারী চাকুরে এবং মা ছিলেন গৃহিনী।শৈশবে মায়ের হাতেই হতেখড়ি তারপর মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের পথ পেড়িয়ে রসায়নে সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করতেই একটি স্কুল এন্ড কলেজে পার্টটাইম (রসায়ন)শিক্ষকতা করেন এবং পরবর্তীতে এমবিএ (ফিন্যান্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার পাশাপাশি বই পড়া ছিল অন্যান্য শখগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১০ এ একজন সরকারী চাকুরে হিসেবে নিজেকে স্থীর করেন এবং কবিতা ও অনুগল্প নিয়ে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হন। সম্প্রতি বইমেলা-২০২৩ ও ২০২৪ এ প্রকাশিত হয়েছে দুটি সমকালীন উপন্যাস নিশিকুমারী ও নিকুঞ্জ নিকেতন। মিশুক স্বভাব ও ভ্রমন পিপাসু মনের জন্য তিনি শুভাকাঙ্খি ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে বেশ প্রশংসিত।