তেইশের জলছবি

-শ্যামল কুমার মিশ্র

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারটার দিকে তাকিয়ে থাকে খোকন

সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে ওর গায়ে

নানা রঙের আঁকিবুকি খেলা

সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে যায় খোকন

চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা ছবি

কোনটাতে মিছিল নগরী কলকাতা

কোনটাতে ক্ষমতা দখলের লড়াই

গান্ধীবুড়ির পাদদেশে এক হাজার দিন বসে

শত শত যুবক যুবতী

কেউ কথা রাখেনি, ফিরে দেখার সময় কোথায়

একটা গোটা ক্যালেন্ডার হারিয়ে গেল…

ক্যালেন্ডারের শেষ পাতায় এসে আটকে যায় খোকন

ব্রিগেড জুড়ে হাজারো কন্ঠের গীতা পাঠ

খোকন যেন শুনতে পাচ্ছে—

“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতী ভারত

অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাস্যহম

পরিত্রানায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম

ধর্ম সংস্থাপনায় সম্ভবামি যুগে যুগে”…

ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে হরেক ছবি

ফুটবল হাতে চলেছে আরো একদল

হাতে আবার স্বামীজীর ছবি

‘ফুটবল’,’গীতা পাঠ’ সব যেন কেমন গুলিয়ে যায় খোকনের…

দিনাবসানে ছায়া দীর্ঘায়িত হয়

জীবনের অপরাহ্ণ বেলায়

দীর্ঘায়িত সেই ছায়া এসে পড়ে

ভেসে ওঠে একটি মুখ

নামহীন, কুলহীন, গোত্রহীন এক বৃদ্ধা ভিক্ষা চায়

কী তার ধর্ম, কী তার পরিচয়

ক্ষুধার অন্ন খুঁজে মরে ভগবান…

ক্লান্ত অবসন্ন খোকনের দুচোখ জলে ভরে

তেইশ আর কয়েক দিন বাদে ফিরে যাবে

বর্ষশেষের দিনগুলো যেন বড় ভারী হয়ে আসে

গাজার হাসপাতালে হাজারো শিশুর মৃত্যু

ভেসে আসে মায়ের বুকফাটা কান্না

মারণাস্ত্র কেড়ে নিয়েছে ওদের আদরের ধন

হিংসা,যুদ্ধ, ক্ষমতার সীমাহীন আস্ফালন…

ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বরপুত্রের দুচোখেও কি জল?

রোদ্দুরটা অনেকটা সরে গেছে

পৌষের শৈত্য মেখে ফিরে যাচ্ছে তেইশ

খোকন আপন মনে বলে ওঠে– ধর্ম থাক না অন্তরমহলে

হৃদয় বিকশিত হোক প্রেম ভালবাসার বন্ধনে

২৪ শে ঘটুক তার নব অভ্যুদয়…

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

কবি পরিচিতি:

সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*