নারী সৌন্দর্য্য
-তৌহিদা জাহান লিপি
◊◊◊◊◊◊◊
হাজার বছর ধরে নারী সৌন্দর্য্যের যে অপরিবর্তনীয় আখ্যান শুনে এসেছি –
আমিও তাকে গ্রহন করেছিলাম, এক চিরসত্য জ্ঞান হিসাবে !
সিনেমা, নাটক গল্পে,ছবিতে, সভায় আলোচনায়, অর্থনীতি,রাজনীতিতে –
নারীর যে অপরিসীম সৌন্দর্য্যের কথা শুনে এসেছি-
তা ছিলো কেবলই, নারীর চলনে বলনে,
চোখে, মৃদুকণ্ঠে, আড়দৃষ্টিতে,
ভীরুতায়, লজ্জায় কিম্বা শব্দহীন হাসিতে !! পেলব দেহে,
ভারী অলংকারে –
অপূর্ব মেকাপে, দামী পোষাকে পরাধীনতার দিন যাপনে –
নিঃসীমতার অসংখ্য নিষেধে নারীর জীবন সীমাবদ্ধ থাকতে হবে——!
“” সেই ছেলেবেলা থেকেই ঘরে বাইরে সর্বত্র দেখেছি,
গুণীজনেরা নারীর সৌন্দর্য্যের এই বিধানগুলোকে
আমাদের অত্যাবশ্যকীয় শিক্ষারূপে শিখিয়েছেন।।
এই অত্যাবশ্যকীয় বিধানের বাইরে সব নারীরই ছিলো অব্যর্থ !
এর অন্যথায় নারী হবে কলংকিত।।
নারী হারাবে তার রূপ মাধূর্য্যতা।।
শোভা হয়ে উঠবে কুরূপা !
বইয়ের পাতায়,বিনোদনের পর্দায়,মাননীয়দের বচনে –
এমনকি নারীর মুখেও শুনে শুনে –
দেখে দেখে, পড়ে পড়ে –
হাজার বছরের বিধানগুলো এমনভাবে রক্তের সাথে মিশে গিয়েছিলো যে –
ওগুলোকে মনে হতো স্বয়ং বিধাতা প্রদত্ত।। মনে হতো প্রাকৃতিক !! “
সৌন্দর্য্যের এই কালো চশমা পড়ে অনেকেই নারীর মাঝে খুঁজে ফিরতো –
পূর্ণিমা,গোলাপ,বৃষ্টি, শুভ্রমেঘ,পাখির কলতান,
এবং এক অমরত্ব ।।
তুমি আমাকে প্রথম দেখলে যেদিন?
সেদিন তোমার চোখেই তাকিয়েই আমি বুঝলাম –
নারীর আসল সৌন্দর্য্য কোথায় ??
আবহমানকালের ঐশীমায়ায় যে জ্ঞানের আষ্টেপৃষ্ঠে এতকাল জড়িয়ে ছিলাম –
সেই জ্ঞানের দূর্ভেদ্য থেকে মূহুর্তে প্রবল আলোড়নে এই তুমিই আমাকে
বের করে এনেছো ——–!!
বিস্ফোরিত চোখে যখন জানতে চাইলাম তবে কোথায় নারীর আসল সৌন্দর্য্য ?
তখন অকম্পিত শব্দে এই তুমিই আমাকে জানালে ——- “আত্মবিশ্বাসে” !!
ওখানেই রয়েছে পূর্ণিমা, গোলাপ,বৃষ্টি,শুভ্রতা, পাখির কলতান,এবং অমরত্ব !!
আর তারপরেই হাজার বছরের সৌন্দর্য্যের,
অবিনশ্বর কালো চশমাটি খসে পড়ে যায়,
আমার অন্তদৃষ্টি থেকে !!
যে চোখ এতদিন আমায় শুধুই একটি ভুল পথেই পরিচালিত করেছিলো-!
◊◊◊◊◊◊◊
কবি পরিচিতি :
আমি তৌহিদা জাহান লিপি। ঢাকায় থাকি। আমি কবিতার পাতা পরিবারের এডমিন প্যানেলে মডারেটর হিসাবে যুক্ত।। আমি ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।। কবিতার পাতা পরিবার থেকে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।