বৃদ্ধাশ্রম থেকে মায়ের চিঠি
-পপি প্রামানিক
⇔⇔⇔⇔⇔⇔
খোকা,
জানিস আমি বড্ড ক্লান্ত
বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছি,
আজ চোখ দু’টোতেও ঝাপসা দেখি
গতকালই আমি নব্বই ছুঁয়েছি।
তবে আমি ঠিকই তোকে দেখতে পাই বাবা
তুই যে আমার নয়নের আলো,
তুই রয়েছিস হৃদয়ের মণিকোঠায়
তোর ছোঁয়াতেই দূর হবে চোখের কালো।
কিন্তু তুই তো আমার কাছে আসিস না বাবা!
আমার জন্য সময় বুঝি তোর খুবই কম,
তোর বড় বাড়িতে সহস্র কাজের ভীড়ে
আমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম।
মনে কি পড়ে তোর সেই ছোট্ট বেলার কথা!
হয়তো কিছু কিছু কথা তোর নিশ্চয়ই মনে আছে,
তবে মনে করার চেষ্টা করিস না বাবা
কারণ কষ্ট পাবি যে পিছে।
জানিস খোকা আমার মাঝে তোর অস্তিত্ব
প্রথম জানলাম যেদিন আমি,
সেদিন থেকে তুইই আমার ধ্যান জ্ঞান
আমার কাছে সবার থেকে তুইই যে দামী।
আমার মাঝে তোর একটু একটু করে বেড়ে ওঠা,
গর্ভে ধারণ এবং হৃদয়ে করেছি লালন,
কত্তো আদরে ভরিয়ে দিয়েছি
বাবা কত্তো কষ্টে করেছি তোকে পালন।
কিন্তু সে কষ্ট ছিল বড় সুখের কষ্ট
জানিস খোকা, সেটা ছিল আমার স্বর্গীয় সুখ,
তোর দুঃখেতে আমার দুঃখ, তোর সুখেতেই সুখ
যখন খোকা রাখতিস তুই আমার বুকে মুখ।
বাবা তোর একটু একটু করে বেড়ে ওঠা,
তোর পড়াশোনা, তোর প্রতিষ্ঠা পাওয়া,
এসবই আমার কাছে এখন স্বচ্ছ স্মৃতি
তুই সুখে থাক এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।
খোকা তোর বাবা ওপারে হয়তো ভালো আছেন
কিন্তু আমি??
আমি ভালো নেই রে বাবা
তোকে ছাড়া কি ভালো থাকতে পারি আমি?
তোর মুখে খুব মা ডাক শুনতে ইচ্ছে করছে
জানতে ইচ্ছে করছে খোকা কেমন আছিস তুই?
বাবা একলা ঘরে ঘুম আসে না
রাতের বেলা আমি যখন শুই।
খোকা, তুই যখন ছোট ছিলি আমি চোখের আড়াল হলে
অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে কাঁদতিস তো খুব,
এখন বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও
থাকিস তো বেশ চুপ।
জানিস বাবা, আমার হয়তো ওপারের ডাক এসেছে
চুকিয়ে সব লেনাদেনা এবার যেতে হবে,
সেটা তো বলতে পারছি না বাবা
দিনটি আমার আসবে কবে?
খোকা আমার অনেক বড় নামে কিংবা মানে
কিন্তু মনের জায়গা বড্ড সংকীর্ণ, খুবই কম,
মা’কে তো বেশ সুখে রেখেছিস
তাই তো তার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম।
——— মা
⇔⇔⇔⇔⇔⇔
কবি পরিচিতঃ
পপি প্রামানিক, সহকারি শিক্ষক, পিতাঃ আশুতোষ প্রামানিক (সদ্যপ্রয়াত), মাতাঃ কানন বালা প্রামানিক, স্বামীঃ বিশ্বজিৎ সাহা শখের কাজ অনেক কিছুর ভীড়ে বর্তমানে অন লাইন ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে লেখালেখি করি।