আমি সেই সদ্যজাত বলছি

-মানব মিশ্র

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

আমি সেই সদ্যজাত বলছি,—-

যে এক অপ্রত্যাশিত অবৈধ অবাঞ্ছিত শিশু।

তোমরাই তো বলো আমরাই আগামীর ভবিষ্যত।

সেদিন আমার বুকেও ছিল আগামীর একমুঠো স্বপ্ন।

দুচোখে বেড়ে ওঠার একরাশ অন্তহীন প্রত্যাশা।

সেদিন আমি জন্ম নিলাম অতন্দ্র প্রহরায় ঘেরা কোনো এক নির্জনতার গোপন কক্ষে।

সেই অমানবিকতার আঁতুড় ঘরে আমার জন্য অপেক্ষা করেছিল পৈশাচিক অভ্যর্থনা।

প্রতিটি সদ্যজাত শিশুর ন্যায় ভূমিষ্ঠ মুহূর্তেই আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম,—ও মা–ও–মা বলে!

জন্মদাত্রীর স্পর্শ পাওয়ার আগেই,-

এক নিমিষে আমায় মুড়ে ফেলা হোলো ঐ নির্মম নিষ্ঠুরতার ছিদ্রহীন প্যাকেজে।

সদ্য কাটা নাড়ীর দূর্বিসহ যন্ত্রণায় আমি তখন চিৎকার করে উঠি।

আমার সেই চিৎকারের শব্দ ঐ পাষান হৃদয় গুলো কে সেদিন নাড়তে পারেনি।

কারণ,– সেটা ছিল পাপের অনল হতে উদ্ভূত এক অসহায়ের আত্মচিৎকার!

ঐ শ্বাস রোধের প্যাকেজের মাঝে আমার প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত।

বেঁচে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টায়,সেই কঠিন লড়াই করতে গিয়ে আমি তখন জ্ঞান হারালাম।

হঠাৎ জ্ঞান ফিরে দেখি,—

আমি যে শুয়ে আছি বিষাক্ত কাঁটায় ঘেরা তৃণ শয্যার মাঝে।

ঐ যন্ত্রণার কাঁটা গুলো আমার কোমল শরীরটা কে তখন রক্তাক্ত করে দিচ্ছে!

আর প্রকৃতি পরমার শীতল স্নিগ্ধ বাতায়ন আমার সারা শরীরে তখন, শীতল শান্তির পরশ বুলিয়ে চলেছে।

হঠাৎ একটা বিষাক্ত কেউটে আমার মুখচুম্বন করে আমার কানে কানে বলে গেল,—-

ওগো শুনছো আগামীর ভবিষ্যত,—

ঐ সৃষ্টি কর্তা পরমেশ্বর তোমায় রক্ষা করবেন।

চারিদিকে তখন ঘনঘোর নিকষ কালো নিঝুম অন্ধকার!

ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে আমি আতঙ্কে শিউরে উঠলাম!

জোনাকিদের অতি সুক্ষ আলোক বিন্দু মুক্তোকণার ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে আমার চারিদিকে তখন ভীড় জমিয়েছে।

আমায় আলোকিত করার তাদের এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি আর ভাবছি,—

তারাও আজ এই প্রতারিতের দুঃখে সমব্যাথী।

হঠাৎ আমার মাথায় তখন মমতা মাখা এক কোমল উষ্ণ অনুভুতির স্পর্শ পেলাম।

ধীরে ধীরে আমার সারা শরীর টা তখন,-

পরম স্নেহের উষ্ণতায় ভরে উঠলো।

আপাদমস্তক কে যেন তার মধুর পরশ বুলিয়েই চলেছে।

তারপর শুনতে পেলাম,-তার ঐ মধুর কণ্ঠস্বরে ভরা ভরষার বানী।

সে যেন আশ্বাসের কণ্ঠে আমার কানে কানে বলছে,— ওরে ভয় কি বাছা আমি তো আছি।

রাত্রি শেষ প্রহরের অন্তিম মুহূর্তে ভোরের আবছা আলোয় দেখলাম,- সে যে এক মা কুকুর।

যে তার সন্তান স্নেহে বুকে আগলে রেখে সারারাত জেগে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দিয়েছে,-

তোমাদের এই আগামীর ভবিষ্যত কে।

উজাড় করে দিয়েছে তার অফুরন্ত স্নেহ মমতা ভালোবাসা।

যা দিতে পারেনি তার ঐ নিঠুরা পিশাচিনী রাক্ষসী গর্ভধারিনী।

যে তার মমতার দুটি হাতে আমায় তার কোমল বক্ষে জড়িয়ে,অপার স্নেহ চুম্বনে ভরিয়ে দেবে।

সেই মমতার দুটি হাত সেদিন আমায় ছুঁড়েফেলে দিলো অকাল মৃত্যুর অন্ধকারে!

যে নাম গোত্রহীন সমাজের জঞ্জাল হয়ে শুধু ঘৃণার বোঝা বয়ে চলেছে।

আজও আমি বেজন্মা জারজ হয়ে,—

সেই সদ্যজাত বলছি।

≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈

কবি পরিচিতি–

মানব মিশ্র। পিতা- ঁপ্রশান্ত মিশ্র।, মাতা- সরস্বতী দেবী, গ্রাম-+পোঃ- জনকা, খেজুরী পূর্মেদিনীপুর।

 

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*