রাঙিয়ে দিয়ে যাও
-শ্যামল কুমার মিশ্র
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
আপন মনে রঙ মাখতে থাকে ঝুমরী
গায়ে হাতে মাথায় হরেক রঙ
কোমরে একটা ট্যানা ছাড়া আর কিছু নাই
মাঝে মাঝে গান গায়
কী ভীষণ সুরেলা গলা…
চাঁদনী রাতে রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকে ঝুমরী
ঠিক বাঁকের মুখে যখন চাঁদটা ঢাকা পড়ে
সে আপন মনে গেয়ে ওঠে–
‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও, যাওগো এবার যাবার আগে
তোমার আপন রাগে, তোমার গোপন রাগে’…
কখন যেন গানটা থেমে যায়
রেল লাইনের উপর বসে থাকে ঝুমরী
দৃষ্টি হারিয়ে যায় দূরে বহু দূরে
একটি ষোড়শী কন্যা হেঁটে চলেছে আসলামের সাথে
ধবধবে জ্যোৎস্না গায়ে মেখে ওরা হাঁটছে
মেয়েটি আপন মনে গাইছে— ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও…
কাকতালীয়ভাবে দিনটা শুধু রঙের ছিল না
ছিল নারী মুক্তির ও দিন
হঠাৎ রাত্রির স্তব্ধতা ভেদ করে ঝাঁপিয়ে পড়লো একদল যুবক
মুখে তাদের ‘প্রেম জিহাদ’ এর স্লোগান
হিঁচড়ে নিয়ে গেল ওরা আসলামকে
ঝোপের আড়ালে ঝুমরীর মাংসে ঘটল নারীর মুক্তি আসলাম হারিয়ে গেল চিরতরে…
সময়ের ধারাপথে হাঁটতে থাকে খোকন
রেলওয়ে ওভার ব্রিজের নিচে এখন বসে থাকে ঝুমরী
উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে স্টেশনের দিকে
ট্রেন আসে যায় মানুষ নামে ওঠে
ঝুমরীর কথা কেউ মনে রাখেনি
রঙের দিনে কেমন সিঁটিয়ে থাকে ঝুমরী
অনেক রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
খোকন শুনতে পায় সেই গান—‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও..যাও…
∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼∼
কবি পরিচিতি:
সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোট বেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …