একটু বাতাস

-শ্যামল কুমার মিশ্র

≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅

পড়ন্ত বেলায় আকাশটা যখন লাল হয়ে ওঠে

লছমি গিয়ে দাঁড়ায় কারখানার সামনের বটগাছটার তলায়

হাতে ধরা বিড়িটা থেকে তখনো আগুন চকচক করে

কারখানার চিমনি থেকে গল গল করে ধোঁয়া বেরোয়

একটা দীর্ঘশ্বাস বুক থেকে বেরিয়ে আসে…

দু’বছর আগে এমনি এক বিকেলে

আকাশ জুড়ে সেদিনও ছিল রঙের খেলা

মরদটা এই বটতলায় শুয়ে লছমির কোলে

মাথা রেখে কাতর স্বরে বলেছিল—

‘আমায় একটু বাতাস দে লছমি

একটু বাতাস

দোরে দোরে গিয়েছে লছমি

এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে

একটু বাতাস চেয়েছিল

কেউই দেয়নি…

হাতে ধরা জ্বলন্ত বিড়িটা দুমড়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় লছমি

গলা পর্যন্ত উঠে আসার থুতুটা ছুঁড়ে ফেলে

চোখের সামনে ভেসে ওঠে দৃশ্যটা

হাসপাতালের গেটে দাঁড়িয়ে লছমি

ট্যাকা না হলে বাতাস মিলবে না

অনেক কাকুতি মিনতি করে

ছোট থেকে বড়– সবার পায়ে ধরে

দিল না ওরা

একজন ওর ডাগর শরীরটা চাইলো

টপটপ করে জল ঝরে পড়ে

ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মরদটা

কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বলে–

তুই কাঁদস না লছমি

সব ঠিক হইয়া যাইব…

ঠিক আর হয় নাই

চোখের সামনে মন্ত্রী-শান্ত্রিরা ঢুকল

বাতাস পাইল

ট্যাকার অভাবে লছমির মরদটা বাতাস পাইল না

শেষবেলায় মরদটা কাতর স্বরে কইলো—

আমায় একটু বাতাস দে লছমি

মুখের মধ্যে মুখ লাগাইয়া কলজে উজাড় কইরা বাতাস দেয় লছমি

পাইরল না..মরদটা চইলা গেল

কারখানার গ্যাটে এখনই পতাকা উঠব

স্বাধীনতার নাকি ৭৫ বছর

মন্ত্রী আইসব..কত কথা হইব

সব ঘেন্না ধইরা যায়…

নির্নিমেষে তাকাইয়া রয় লছমি

এখন আর ওখানে যায় না লছমি

দূর থাইকা পতাকাকে প্রণাম করে

মৃদুমন্দ বাতাস এসে লছমির বুকে পরশ এঁকে যায়

দূর আকাশে মেঘের মাঝে

লছমি আজও কারে খোঁজে…

≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅≅

কবি পরিচিতি:

সাহিত্যকে ভালোবেসে কিছু লেখার চেষ্টা। কখনো তার প্রকাশ কবিতা, অণুগল্প কিংবা প্রবন্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে আমার জন্ম। গ্রামবাংলার মেঠোপথে কেটেছে শৈশব। তারপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। লেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনে তা এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দুবার বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র শ্রদ্ধেয় সন্তোষ কুমার অধিকারীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। শিক্ষকতাকে ভালোবেসে প্রায় ৩৪ টা বছর কেটে গেছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অন্যতম প্রাপ্তি “দ্রোণাচার্য্য” পুরস্কার। ভালো লাগে পড়তে, লিখতে আর মানুষের মাঝে সময় কাটাতে। আর তাই সৃষ্টি “মনীষী চর্চা কেন্দ্রের” যা মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। সাহিত্যের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াতেই আমার আনন্দ …

 

 

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*