বাংলো বাড়িতে অমাবস্যার এক রাত

-পুপাই দাস

⊆⊇⊆⊇⊆⊇⊆⊇⊆⊇

দিনটা মঙ্গলবার হবে বোধ হয়।তিথিটা অমাবস্যার তিথি।দিনটা যেন সারাদিন কেমন কষ্ট ও আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একা ঘুমোতে গেলাম।তখন মধ্যরাত্রি ।এদিকে অমাবস্যার এক ভয়ঙ্কর ঘটনা স্বপ্নে আমাকে গ্রাস করলো।

হঠাৎ আমি কোনো এক কারনে মনমরা হয়ে একটা গলিপথ ধরলাম ।গিয়ে দেখি এক বিরাট ঘন অরণ্য।নিশব্দ সমস্ত গাছপালা।একটুকু বাতাসও নেই।তার সুদূরে এক অতি ছোটো বাংলো।পাশ দিয়ে নিস্তব্ধ এক নদী আপন বেগে বয়ে চলেছে।

হাফ ছেড়ে ভয়ে ভয়ে ওই বাংলোর একটা বাড়িতে প্রবেশ করলাম।ভেতরের অপরিচ্ছন্ন ও ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে আমি ওটার বারান্দাতেই আশ্রয় নিলাম।বসে আছি একটা থামে ,সামনে কিছুটা দূরে ঐ অন্ধকার ও কুয়াশাছন্ন বনটা।হাঠাৎ করে গাছের মধ্যে থেকে একটা লাল মানবী ছায়া বেরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।হৃদপিন্ডের স্পন্দন তখন প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড় ।পিঞ্জরের খলজেটা প্রায় মৃত।ভয়ে কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে শুনতে পেলাম ঐ বাংলোর ধারের নদীটার জলের গতিবেগের বিকট এক কুলু কুলু শব্দ।

আতঙ্ক আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল।কারন নদীর স্রোতের অনুকূলে প্রবাহিত হওয়ার আওয়াজট ছিল আমার কাছে খুবই ভয়জনক।যেটা ছিল প্রায় গভীর রাতে নিঃশব্দ পরিবেশে বাড়ির দরজা খোলার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ।কি করি এদিকে নদীর ভয়ঙ্কর শব্দ, অপর দিকে লাল আতঙ্কিত ছায়া।

অবশেষে গেলাম ওই নদীটার কাছে।ওফ !সে কি দৃশ্য ,এক অবাক কান্ড ঘটল,ওই নদীর জলে আমি আমার নিজের অর্ধ দেহ দেখতে পেলাম।আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলাম।কেউ একজন এসে আমায় এক গেলাস জল ধরিয়ে বললো-“কি!ভয় পেলি বুঝি।অবিশ্বাস্য ঘটনা তাই না?”তারপর আমি চোখ খুললাম ।হায়!দেখি আমার ধারেকাছে কেউই নেই।তখন আমি নিজেও স্থির করতে পারলাম না যে এ আমার সাথে কি প্রতারণা হচ্ছে।

হঠাৎ দেখি ওই জলের ওপর ভেসে থাকা আমার অর্ধ দেহটা আমায় হাতে ঈশারা করে ডাকছে।কি করবো, যাবো?এদিকে না গেলে আবার যদি বিপদের সম্মুখীন হই।কিছুটা এগিয়ে ওটার কাছে যেতেই ওটা অদৃশ্য হয়ে গেল।আমি তৎক্ষনাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।ওই জায়গাটাতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।কিছুক্ষন পরে মনে হলো পেছন থেকে কেউ একজন যেন আমায় ডাকছে।দাদু-ঠাকুমাদের কাছ থেকে একটা গল্প শুনেছিলাম–“যখন এক রাত্রিতে কোথাও যাবি তখন ভুলেও পেছন ফিরে তাকাবি না ,তাহলে বিপদ ঘটতে পারে”।জানি না তা সত্যি কিনা!ফিরলাম না পিছন দিকে।কিছুক্ষন পরে কেউ যেন পেছন থেকেই আমার হাত দুটো বেঁকিয়ে ধরলো।আমি তো তখন প্রায় মৃত,জনশূন্য ঘোর রাত্রিতে জঙ্গলে হঠাৎ করে কে আমার সাথে এমন মোকাবিলা করছে?কি-ই বা তার উদ্দেশ্য?

তারপর কোনো কথা নেই,ওই লাল রঙের মানবী ছায়াটা আমার সামনে এসে উপস্থিত হলো।তখন আমি বাক্যহারা হয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে আছি।ও আমাকে শুধু একটা কথাই বললো-“এটা আমাদের আবাস্থল ,তুই আমাদের না জানিয়ে এখানে এলি কেনো?”আমি তাঁকে বোঝাতেই পারলাম না আমার মতিভ্রম এর কথাটা ।কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হঠাৎ করে সে আমার চোখে ও মুখে কালো রঙের কি যেন একটা বেঁধে দিল,আমি কিছুই উপলব্ধি করতে পারলাম না।

এরপর প্রায় আধঘন্টা ধরে ছটফট করতে করতে আমার অসহায় দেহ রূপ পরিবার থেকে নিশ্বাস-প্রশ্বাস রূপ সবচেয়ে কাছের ঘনিষ্ঠ বাবা-মা হারিয়ে গেল।যারা পরে আমার কাছে আর ফিরে এলো না।আমার মৃত দেহটা ওখানেই পড়ে রইল ……….

⊆⊇⊆⊇⊆⊇⊆⊇⊆⊇

লেখক পরিচিতি:-

পুপাই দাস, ঠিকানা–মৌশুনি(বাগডাঙ্গা ), দক্ষিন 24পরগনা, বয়স 18। আমি 16 বছর বয়স থেকেই লেখালিখি করি।লেখালিখি শুরু আমার খুব প্রিয় শিক্ষক প্রণব কুমার মুখার্জী(সংস্কৃত শিক্ষক–মনসাদ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়) বাবুকে অনুকরণ করেই জীবনে প্রথম লেখার কলম উদ্বোধন করা । MANASADWIP RAMAKRISHNA MISSION HIGH SCHOOL থেকে মাধ্যমিক পাস করে এখন DEBNAGAR MOKSHODA DINDA HIGH SCHOOL এ পাঠরত।কবিতা লেখাতে অনেক Certificate আছে।’পরিচয় পত্রিকা’;’বাহিনী পত্রিকা’;’হৃদয়দিঘীর কথকতা’;’সাতকাহন’;’বৈশাখি সংখ্যা’;’আনন্দমেলা সাহিত্য পত্রিকা’-এছাড়াও বহু ই-পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে আমার লেখা কবিতা।

Leave a comment.

Your email address will not be published. Required fields are marked*