মায়াবী রাত্রি
-নিমুভা চৌধুরী
♦♦♦♦♦♦♦
সি বিচ – এর সিক্ত পথ ধরে পৌলমী হাঁটছে । সাথে মৃদুল । একে অপরের হাত ধরে শহরের কোলাহল থেকে নিভৃত দূরে । জায়গাটা দীঘা থেকে সামান্য দূরে । গা ঘেষাঘেষি ভীড় এড়িয়ে । পৌলমী তার নতুন জীবনে বিভোর হয়ে স্বামীর অনুরাগের ছোঁয়ায় স্বপ্নে মগ্ন । নির্জন সমুদ্র ক্ষনে ক্ষনে পৌলমীর আলতা পায়ে আলতো পরশে নিজের উপস্থিতির প্রমান দিয়ে চলেছে ।
বিয়ের এক বছর হতে আর দুদিন বাকি । মৃদুলের ইচ্ছে ওরা প্রথম বিবাহবার্ষিকী এখানে একান্তে পালন করবে । তাছাড়া বিয়ের পর অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে দুজনের ওপর দিয়ে । মধুচন্দ্রিমার ইচ্ছে থাকলেও সেভাবে সুযোগ হয়নি ।
অনেক রাত হলো পৌলমী , এবার হোটেলে চলো ।
আর একটু দাঁড়াও না । এই প্রথম সমুদ্র দেখলাম । তাও আবার তোমার সাথে । এই সময়টা যদি থেমে যেত । দেখো মৃদুল সমুদ্রের বুকে থেকে ভেঙ্গে পড়া আলগা ঢেউগুলো সমুদ্র তটের বালিয়াড়ি–র বুকে কি সুন্দর লুটিয়ে পড়ছে ।
চারপাশ ফাঁকা পৌলমী । আর দেরি করা যাবে না । তাছাড়া কাল সকালে সূর্যোদয় দেখার জন্য ভোর ভোর উঠতে হবে ।
দুজনে হোটেলে ফিরলো । পরেরদিন অনেক ভোরে উঠে চলে যায় সি বিচ – এ নীল দিগন্তের কায়া জুড়ে রক্তিম আবিরের আলোর ছটায় সূর্যোদয় । সূর্যের প্রথম সোনালী কিরণে সমুদ্র উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছে । সেই খুশির আগুন লেগেছে পৌলমীর চোখে ।
অক্লান্ত সমুদ্রের বুকে দুজনে জীবনের বিষাদে ভরা দিনগুলো বিসর্জন দিয়ে একে অপরের প্রতি চঞ্চল হয়ে ওঠে ।নোনা জলের ফেনিল ধারায় স্নান সেরে দুজনে হোটেলের পথে । হঠাৎ সামনে কে এলো ? চেনা মুখ । পৌলমীর বালিমাখা হাসি মুখে বিষন্ন ছায়া ।
এ তো মৃদুলের দাদা । কিরে কবে এলি তোরা মৃদুল ?
কাল এসেছি । আর তুমি এখানে , একা না বৌদিও আছে ?
না না , আমি একা । একটা মিটিং আছে , তাই….।
এক বছর আগে মৃদুল আর পৌলমী ঘরের অমতে পালিয়ে বিয়ে করে । পৌলমী খুব ভালো নাচে । অনেক স্টেজ শো করেছে । নাচের জগতে ওর অনেক নাম ডাক। কিন্তু মৃদুলের পরিবার একদম পছন্দ করেনা যে । বাড়ির বৌ নাচবে । তাও আবার বাইরের লোকের সামনে । তাই ওরা পালিয়ে বিয়ে করে । মৃদুল পৌলমীকে খুব বোঝে আর সমর্থন করে ।
ঠাকুমার ইচ্ছে নাতবৌ-এর মুখ দেখবে । তাই মৃদুল আর পৌলমীকে বরণ করে ঘরে তোলা হয় । নতুন বৌ-এর রূপ আর ব্যাবহারে সবাই মুগ্ধ । একদিন ছাদে পৌলমী একা দাঁড়িয়ে ছিলো । সেই সময় জয়ন্ত সেখানে আসে । সে বলে , ” ভালোই তো আছো , নিজের রূপে আমার বোকা ভাইটাকে ফাঁসালে তো ।”
মৃদু হেসে পৌলমী বললো , ” মৃদুল বোকা নয় , ও খুব সরল আর সৎ চরিত্রের মানুষ । তোমার মতন প্রেমের খেলা খেলে ছেড়ে দেয়নি । বিয়ে করে আমাকে যোগ্য সন্মান দিয়েছে । “
পরেরদিন মৃদুলরা ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে । এখন ওরা দূরে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে ।
এক বছর পর আজ আবার দেখা । পুরনো দিনের কালো ছবিগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে পৌলমীর । মৃদুল পৌলমীর হাত ধরে জয়ন্ত-র পাশ কাটিয়ে চলে যায় । জয়ন্ত পেছন ঘুরে দেখলো মৃদুল আর পৌলমীকে । অনুশোচনায় মাথা নিচু করে চলে গেল ।
পরেরদিন ওদের বিবাহবার্ষিকী । সারাদিন দুজনে খুব ঘুরেছে । সমুদ্র তট জুড়ে ফেনিল ঢেউ-এ ভেসে আসা নানান রঙের ঝিনুকে পৌলমীর আঁচল ভরিয়ে দিয়েছে মৃদুল । পৌলমীর আনন্দের পরিধি অন্তহীন ।
অভিমানী মন নির্মল রাতের গভীর অন্ধকারে মৃদুলের বুকে মাথা রেখে সমুদ্র সম ভালোবাসায় ডুব দিলো অনন্ত শান্তির খোঁজে । সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ – এর গর্জনে বালুচরের রাত্রি মায়াবী ।
♦♦♦♦♦♦♦
লেখক পরিচিতি-
নিমুভা চৌধুরী । বাবার নাম স্বর্গীয় শ্রী স্বপন ব্যানার্জী । মায়ের নাম শ্রীমতী অঞ্জনা ব্যানার্জী । জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর । ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বার্ণপুরে । জন্ম , পড়াশোনা , সব এখানেই । স্বামীর নাম শ্রী বিদেশ কুমার চৌধুরী । গৃহবধূর । একটি সন্তানের মা । বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা । নিরিবিলি একা থাকতে ভালো লাগে । ঈশ্বরে বিশ্বাসী ।