পরিচয়
বাচ্চাটিকে আমি অনাথ আশ্রমে রেখে আসবো ।
কিন্ত সে আশ্রম চায় না,তার চাই বাবা-মা ।
আমি বললাম – বাবা মা থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে,তাও বড়লোকের !
বাচ্চাটি ওর মায়ের মতই, সব সময়ই নির্বিকার ।
ওর মা তো মৃত্যুতেও নির্বিকার ছিলো ।
অবশ্য ক্ষত বিক্ষত মনে মাত্র আঠারোয় মৃত্যুটা স্বাভাবিকই ।
আঠারো বসন্ত পেরোলেও জরাজীর্ণ ফুলের ভাজে
বাসন্তী হাওয়া কোন বারই তার কাছে আসেনি ।
আবছায়া গলির বাঁকে যে কবিতাদের কবরখানায়
বসন্ত ছেড়া স্তবক রেখে যায় ,
সেখানে কোথাও কোন আলো নেই ।
মাংসের দাবীতে শেয়ালদের যুদ্ধে
কালো হতে হতে জোস্নার আলো
ওখানে আর আলাদা করে চেনা যায় না ,
জোস্ননা আর আলো দেয় না ।
এমনিতেও চাদের নিজের কোন আলো নেই,
হয়তো সূর্যও আড়ালে অন্যকেউ ।
ঘুমন্ত শহরে আবার তার শরীর রক্তে ভেজে ।
শরীরে কালশিটে থাকতেই সেই একই বসন্ত তার জীবনে,
পিঠে চাবুক দিতে আবার সেই একই ফাগুন তার দোকানে ।
প্রতি রাতের অন্ধকারে অতলে মরে
সে যে স্বচ্ছল দিনের ছবি আঁকে
রাতের শেয়ালরা সেখানে আঁচড় কেটে
দিনে ছি: ছি ঘেন্না করে তাকে ।
অভাবের অসহায়ত্ব মেনে প্রতি রাতেই
সে স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহন করে ।
কিন্ত এ মৃত্যতে কোন শোক সমাবেশ হয় না ।
কারন মনের মৃত্যু উপেক্ষিত ।
শোক হয় শুধু শরীর ঘিরে,
তাও যদি হয় চকচকে ও তথাকথিত পবিত্র ।
উদ্ভ্রান্ত শব্দের মিছিল এড়িয়ে রাতে
আমি যখন পালাতে ব্যস্ত তখন দেখি ভদ্রলোকেরা
দরজায় দরজায় টোকা দিচ্ছে ।
ভেবে পাই না ,মেয়েটি তো নষ্ট ,খারাপ !
তাহলে ভদ্রলোকেরা অতো রাতে ওর দরজায় দাড়িয়ে কেন ?
আমি ইচ্ছে করলেই দরজা ভেঙ্গে
একটি স্বপ্নকে বাঁচার মত বাঁচাতে পারতাম ।
কিন্ত আমার ক্ষমতা নেই ,
যাদের আছে তারা বাঁচায় না, হত্যা করে ।
যে দরজাটি ভাঙ্গার ক্ষমতা আমার নেই,
এই বাচ্চাটি আমি তার বাহিরে পেয়েছি ।
ওকেও আমি বাঁচাতে পারবো কি না জানি না,
হাজার হোক সেও কন্যা সন্তান ।
তাকে বরং অনাথ আশ্রম রেখে আসি ।
অন্তত অনাথ পরিচয় পাবে ।
যদিও সে অনাথ নয়,
কিন্ত তার নেই পিতৃ পরিচয় –
বুকে হাত দিয়ে কেউ কি বলতে পারবে,
আসলে কারা পতিত ?
খালেদ মাহমুদ খান
২৫/০৯/২০২১